posted by: diner dak desk
ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান ?
ধূমপান মানব সমাজের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করে। তাই নিঃসন্দেহে ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম। এই প্রসঙ্গে বর্তমানে যুগের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাউদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের প্রধান মুফতি আল্লামা শেখ ইবন বায বলেছেন: ‘‘ধূমপান হারাম, যেহেতু তা অপবিত্র ও নিকৃষ্ট জিনিস এবং অসংখ্য ক্ষতির কারণ।’’ আল্লাহ্ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য শুধু পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। আর তাদের উপর অপবিত্র জিনিস হারাম ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে আছে:
﴿ يَسَۡٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ﴾ [المائدة: ٤]
‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন জিনিস তাদের উপর হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুন, তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিস গুলোই শুধু হালাল করা হয়েছে।’’ (আল-মায়েদা: ৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আল-আ‘রাফে তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘‘তিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেন আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য সর্বপ্রকার পবিত্র জিনিস হালাল করেন ও তাদের উপর সর্বপ্রকার অপবিত্র জিনিস হারাম করেন।’’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৭)
সকল প্রকারের ধূমপান কখনই পবিত্র জিনিসের অর্ন্তভুক্ত নয়। বরং তা মারাত্মক ক্ষতিকর ও অপবিত্র জিনিস। তাই ধূমপানের ব্যবসাও মাদক দ্রব্যের ব্যবসার মতো নাজায়েয। অতএব, যারা ধূমপান করে ও ধূমপানের ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের জন্য ওয়াজিব দ্রুত তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং অতীত কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ভবিষ্যতে এ কাজ না করার অঙ্গীকার করা। আর যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে তওবা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তওবা কবুল করেন। যেমন: আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
‘‘হে মুমিন বান্দারা! তোমরা প্রত্যেকে আল্লাহর নিকট তওবা কর, নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।’’
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢]
‘‘এবং নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তওবা করে ও ঈমান আনে এবং নেক ‘আমল করে অতঃপর সত্য সঠিক পথ অবলম্বন করে।’’ (ত্বাহা: ৮২)
আজ মুসলিম জাহানের ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ মত হলো, ‘‘ধূমপান হারাম, এমনকি তা ক্রয় বিক্রয়ের জন্য দোকান ভাড়া দেওয়াও হারাম।’’ কোনো হারাম কাজের সহযোগিতাও হারাম।
ধূমপান হারাম হওয়ার আরেকটা বড় দলীল হলো, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]
‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’’ (আল-বাকারা: ১৯৫)
ধূমপায়ী যেমন নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি সে ধীরে ধীরে নিজের জীবনী শক্তি নষ্ট করে আত্মহত্যার মত অপরাধ করছে। অর্থের অপচয় বা অর্থ নষ্ট ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ﴾ [الاسراء: ٢٧]
‘‘নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’’ (ইসরা: ২৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١ ﴾ [الاعراف: ٣١]
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’’ (আল-আ‘রাফ: ৩১)
ধূমপান কেবল অপচয় নয়, সম্পূর্ণ ক্ষতিকর কাজে অর্থ নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।
আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে দূর্গন্ধ হয় এমন সবজি বা কাচা পেয়াজ, রসুন খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন, যেমনটি সাহীহ আল-বুখারীর (৯/১১০) নিম্নের হাদীছটিতে রয়েছে:
«مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلًا فَلْيَعْتَزِلْنَا، أَوْ لِيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا، وَلْيَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ». (صحيح البخاري (9 / 110).
এতে ফেরেশতা ও মানুষের কষ্ট হয়ও হয়, হাদীসে আছে:
«مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ» صحيح مسلم (1 / 395) .
“যে ব্যক্তি পিয়াজ, রসুন এবং পিয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজী খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের ধারে কাছেও না আসে, কেননা; মানুষ যে খারাপ গন্ধ দ্বারা কষ্ট পায়, ফিরিস্তারাও তদ্রূপ কষ্ট পায়।” (সাহীহ মুসলিম: ১/৩৯৫)
অন্য হাদীসে আছে,
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَهُ». (صحيح البخاري (7 / 26).
‘‘যে কেউ আল্লাহ্ তা‘আলা ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’’ (বুখারী: ৭/২৬)
আরেক হাদীসে আছে,
«المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، » (صحيح البخاري (1 / 11) .
‘‘ঐ লোক প্রকৃত মুসলিম, যার মুখ ও হাত হতে অন্য মুসলিম নিরাপদে আছে।’’ (বুখারী: ১/১১)
আর ধূমপান দ্বারা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়, নিরপরাধ কোনো মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া হারাম: আল-কুরআনে রয়েছে:
﴿ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨ ﴾ [الاحزاب: ٥٨]
“কোনো মুমিন পুরুষ-নারী কোনো অপরাধ না করা সত্বেও যারা তাদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহের বোঝা বহন করে। (আল-আহযাব: ৫৮) বিড়ি- সিগারেটের ধোঁয়া দ্বারা কষ্ট দেওয়াও এমন মিথ্যা অপবাদ এবং একটি স্পষ্ট গুনাহ।
জনৈক ব্যক্তি রাস্তার মধ্যে পতিত একটি গাছ কেটে মানুষের কষ্ট দূর করে দেওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছিল। (আল্লাহু আকবার) (দ্র: সহীহ মুসলিম: ৪/২০২১)।
তাহলে বলুন ধূমপানের অবস্থা কি? বলা হয়: কয়লার কালি ধুলেও ময়লা যায় না। একবার ধূমপান করলে যতই মুখ পরিষ্কার করেন তা সহজে দূর হয় না। এমনকি ধূমপায়ীদের সারা শরীর ও কাপড় পর্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। অধূমপায়ীরা তার অত্যাচার থেকে কমই রেহাই পায়। তার আশেপাশে কিছুসময় থাকলে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণে আপনাকেও সবাই ধুমপায়ী বলবে। অতএব আসুন ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়াজ তুলি—
‘‘ধূমপায়ী, অধূমপায়ী ভাই ভাই
সবাই ধূমপানের বিদায় চাই।’’
‘‘আর করব না ধূমপান
করব এবার দুধপান।’’
‘‘মদপান যেরূপ
ধূমপান সেরূপ।’’
‘‘মদ্যপানে ক্ষতি যা
ধূমপানে ক্ষতি তা।’’
‘‘করব না আর বিষপান
করবই দূর ধূমপান।’’
আরো দেখুন :
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন