বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭

সূরাহ ফাতিহাহ —আমরা যা শিখিনি --- (পর্ব ৪) আয়াত-- ৩

 


ইসলামিক জীবন সাজাতে অ্যাপস :                                                                    
১. "কুরআনের কথা"   ২ . "বাংলা হাদিস"  ৩ . "আল-হাদিস"   ৪ . "কম্পিউটার অ্যাপস -- "জিকির"  ৫ . Al Quran (tafsir & by word) 
৬. Doa and Zikir (Hisanul Muslim) "হিসনুল মুসলিম"    ৭ . "green tech" এর সবগুলোই ভাল

الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

এই আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তিনি কেমন প্রভু, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে কী ব্যাপক পরিমাণের তথ্য আছে তা অকল্পনীয়। প্রথমত, রাহমা-ন এবং রাহি-ম: এই দুটো শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ: দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিতে থাকে। মায়ের গর্ভ শিশুর জীবনের সব মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা করে দেয়, শিশুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে, শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়। শিশুর জন্য সকল দয়ার উৎস হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ।
এখন রাহমান এবং রাহিম দুটো শব্দই এসেছে রাহমাহ থেকে, কিন্তু যেহেতু শব্দ দুটোর গঠন দুই ধরনের, তাই তাদের অর্থ দুই ধরণের দয়ার—

আররাহমা-ন

রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু, অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ تعالى তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারব না। একজন মা যেমন তার শিশুর জন্য সবরকম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে, সবরকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে, আল্লাহ تعالى তার থেকেও বেশি দয়ার সাথে তাঁর সকল সৃষ্টিকে পালন করেন, রক্ষা করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেন। আল্লাহ تعالى তাঁর অসীম দয়া দিয়ে প্রকৃতিতে হাজারো ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে নানা ভাবে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করেছে, চরম দূষণ করেছে, অবাধে গাছ, পশুপাখি নিধন করেছে। কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয় এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে। শুধু ইউরোপেই প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন গবাদি পশু এবং ৮ বিলিয়ন মুরগি খাবার জন্য হত্যা করা হয়।[২৩] তারপরেও আমাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না; কারণ, আল্লাহ تعالى পরম দয়ালু।

পর্বগুলো : 
পর্ব -১,   পর্ব -২,   পর্ব -৩
দ্বিতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি কোনো কিছু এই মুহূর্তে হচ্ছে—তা নির্দেশ করে। যেমন আপনি যদি বলেন: “মুহম্মদ একজন উদার মানুষ”, তার মানে এই না যে মুহম্মদ এই মুহূর্তে কোনো উদার কাজ করছে, বা কাউকে কিছু দান করছে। কিন্তু রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, তা নির্দেশ করে এই মুহূর্তে আল্লাহ تعالى অকল্পনীয় দয়ালু। তিনি আপনাকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে, আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে, পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং গ্রহকে এই মুহূর্তে, একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।
তৃতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যাপার নির্দেশ করে। একই ধরণের কিছু শব্দ হল জাওআ’-ন (جوعان) যার অর্থ প্রচণ্ড খুধায় কাতর, আ’তশা-ন (عطشان) প্রচণ্ড পিপাসার্ত। এই ধরণের শব্দগুলোর প্রতিটি একটি অস্থায়ী ধারণা নির্দেশ করে, যা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, খাবার খুধাকে দূর করে দেয়, পানি পিপাসাকে দূর করে দেয়। ঠিক একইভাবে আমরা যদি আল্লাহর تعالى কথা না শুনি, তাহলে আল্লাহ تعالىতাঁর রহমতকে আমাদের উপর থেকে তুলে নিতে পারেন। আল্লাহর تعالى রহমত যে অস্থায়ী, তা রাহমা-ন শব্দটির গঠন নির্দেশ করে।[১][১৮]
আররাহি-ম
রাহি-ম এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘ইম’ −সেটা ‘সবসময় হচ্ছে’ এমন কিছু নির্দেশ করে। আল্লাহ تعالى নিরন্তর করুণাময় প্রভু। তিনি মানুষের মত অল্প করুণাময়, মাঝে মাঝে করুণাময় নন। আল্লাহ কিন্তু শুধুই বলতে পারতেন “তিনি পরম করুণাময়”, ব্যাস। কিন্তু একজন পরম করুণাময় কিন্তু সবসময় করুণা নাও দেখাতে পারেন। তিনি সকালে করুণা দেখালেন, রাতে আর দেখালেন না। কিন্তু না, তিনি নিরন্তর করুণাময়। তিনি প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে করুণা করছেন। আপনি যখন সকালে ফজরের এলার্ম বন্ধ করে নামাজ পড়বেন কিনা তা কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে আবার ঘুম দেন, তখন আপনার একটা হাত খুলে পড়ে যায় না। আপনি যখন একজন অন্ধ ফকিরের পাশ দিয়ে না দেখার ভান করে হেটে চলে যান, তখন কিন্তু আপনার চোখ দুটা নষ্ট হয়ে যায় না, কারণ আল্লাহ নিরন্তর করুণাময়। আপনি তাঁর এক মামুলি দাস হয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁর আদেশ অমান্য করে, তাঁকে আপনার পরিবারের সদস্যদের চাহিদা থেকে কম গুরুত্ব দিয়ে, ‘লোকে কী বলবে’ এই ভেবে ক্রমাগত তার আদেশ ভেঙ্গে যাবার পরেও তিনি আপনাকে প্রতিদিন ছেড়ে দেন। কারণ তিনি ‘রাহি-ম’ নিরন্তর করুণাময়।
এখন আল্লাহ تعالى যদি অকল্পনীয় এবং নিরন্তর দয়ালু হন, তাহলে কি আমরা যা খুশি তা-ই করে পার পেয়ে যাবো? কারণ, তাঁর দয়ার তো কোনো শেষ নেই?
তাহাজ্জুত সলাতের আগে নবী মুহাম্মদ (সা:) যে দোয়া পড়তেন।
দোয়া ও যিকির Doa and Zikir (Hisanul Muslim)
কুরআনের তাফসীর (word by word)
আল-হাদিস ডাউনলোড করুন 
"বাংলা হাদিস" download করুন
দ্বীনের ডাকের সকল পোষ্ট

আরো দেখুন :

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

সূরাহ ফাতিহাহ —আমরা যা শিখিনি -- (পর্ব ২)


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর تعالى নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

যদিও আয়াতটির প্রচলিত অনুবাদে বলা হয় “শুরু করছি আল্লাহর নামে…”, কিন্তু বিসমিল্লাহতে “শুরু করছি” সরাসরি বলা নেই। এর সরাসরি অর্থ: “আল্লাহর নামে।” তবে আরবি ব্যাকরণ অনুসারে ‘বিসম’ এর আগে কিছু একটা আসবে। এক শ্রেণীর ব্যাকরণবিদদের মতে এর আগে একটি ক্রিয়াপদ আসবে, যেমন, ‘আমি তিলাওয়াত করছি’, ‘আমি শুরু করছি’ ইত্যাদি প্রেক্ষাপট অনুসারে ‘আমি অমুক করছি’ দিয়ে। আরেক শ্রেণীর ব্যাকরণবিদ অনুসারে এর আগে একটি বিশেষ্য আসবে, যেমন ‘আমার খাওয়া’, ‘আমার পড়া’ ইত্যাদি আল্লাহর নামে। এখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সরাসরি ‘শুরু করছি’ না বলে বিসমিল্লাহ-এর প্রয়োগকে আরও ব্যাপক করে দিয়েছেন।[১৯]
পর্বগুলো : 
পর্ব -১,   পর্ব -২,
আমরা ‘আল্লাহর নামে’ শুধু শুরুই করি না, বরং পুরো কাজটা করি আল্লাহর تعالى নামে এবং শেষ করিও আল্লাহর تعالى নামে। আপনি বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলেন, কিন্তু খাবারটা যদি কেনা হয়ে থাকে হারাম রোজকার থেকে, তখন সেটা আল্লাহ تعالى নামে খাওয়া হল না। আপনি বিসমিল্লাহ বলে একটা ফাইল নিলেন সই করার জন্য এবং সই করার আগে অন্যদিকে তাকিয়ে খুক্‌ খুক্‌ করে কেশে হাত বাড়িয়ে দিলেন ঘুষ নেবার জন্য, তাহলে সেটা আর আল্লাহর নামে সই করা হল না। যতই বিসমিল্লাহ বলা হোক না কেন, খারাপ কাজে আল্লাহর تعالى বরকত থাকে না।
বিসমিল্লাহ কোনো নতুন কিছু নয়। নবী নুহ عليه السلام কে আল্লাহ تعالى তার জাহাজে উঠার সময় বলেছিলেন, ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ “আরোহণ কর আল্লাহর নামে…”(১১:৪১) নবী সুলায়মান عليه السلامযখন রানী শিবাকে বাণী পাঠিয়েছিলেন, তখন তা শুরু হয়েছিল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে (২৭:৩০)। এই দুটি আয়াত থেকে আল্লাহ تعالىআমাদেরকে শেখাচ্ছেন: আমরা যখন কোনো যাত্রা শুরু করবো, বা কোনো দলিল বা চিঠি লিখব, তখন আমরা যেন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে শুরু করি।[১]
তাহাজ্জুত সলাতের আগে নবী মুহাম্মদ (সা:) যে দোয়া পড়তেন।
দোয়া ও যিকির Doa and Zikir (Hisanul Muslim)
কুরআনের তাফসীর (word by word)
আল-হাদিস ডাউনলোড করুন 
"বাংলা হাদিস" download করুন
দ্বীনের ডাকের সকল পোষ্ট

আরো দেখুন :

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]


সূরাহ ফাতিহাহ —আমরা যা শিখিনি --- (পর্ব ৩)

 

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ تعالى তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ :

এখানে মনে হতে পারে যে, আমরা আল্লাহর تعالىপ্রশংসা করছি। যেমন আপনি কাউকে বলেন – “আপনি অনেক ভালো”, তেমন আমরাও আল্লাহকে تعالى বলছি যে, সমস্ত প্রশংসা তাঁর — ব্যাপারটা তা নয়। “আলহামদু লিল্লাহ” কোনো ক্রিয়া বাচক বাক্য নয়, এটি একটি বিশেষ্যবাচক বাক্য। সহজ বাংলায় বললে, এখানে কোনো কিছু করা হচ্ছে না বরং কোনো সত্যের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। যেমন: আমরা যখন বলি সূর্য আলো দেয় —তখন আমরা একটি সত্যের পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা কিন্তু প্রশংসা করে বলছি না: আহা! সূর্য, তুমি কত আলো দাও!
সূর্য সবসময়ই আলো দেয় — সেটা আমরা বলি আর না বলি। আমরা সবাই যদি ‘সূর্য আলো দেয়’ বলা বন্ধ করেও দিই, সূর্য ঠিকই আলো দেবে। ঠিক একই ভাবে আলহামদু লিল্লাহ অর্থ “আল্লাহর تعالىসমস্ত প্রশংসা”, সেটা আমরা বলি আর না বলি, সমস্ত প্রশংসা ইতিমধ্যেই আল্লাহর।[১৮] যদি কেউ আল্লাহর تعالى প্রশংসা নাও করে, তারপরেও তিনি স্ব-প্রশংসিত। পৃথিবীতে কোনো মানুষ বা জ্বিন না থাকলেও এবং তারা কেউ আল্লাহর تعالى প্রশংসা না করলেও, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর تعالى ছিল, আছে এবং থাকবে। বরং এটা আমাদের জন্যই একটা বিরাট সন্মান যে, আমরা আল্লাহর تعالى প্রশংসা করার সুযোগ পাচ্ছি।
সুরাহ ফাতিহা’র এই আয়াতটির বাক্য গঠন দিয়েই আল্লাহ تعالى আমাদেরকে তাঁর অবস্থান কত উপরে এবং আমাদের অবস্থান কত নিচে—তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি ইতিমধ্যেই প্রশংসিত; আমাদের ধন্যবাদ এবং প্রশংসা তাঁর দরকার নেই। তাহলে কেন আমাদের আল্লাহর تعالى প্রশংসা করা দরকার? তাতে কী লাভ?
পর্বগুলো : 
পর্ব -১,   পর্ব -২,
২০০৩ সালে  টাইম ম্যাগাজিনের নভেম্বর সংখ্যায়একটি আর্টিকেল বের হয়েছে কৃতজ্ঞতার উপকারিতার উপরে। সেখানে বলা হয়েছে: ২,৬১৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপরে গবেষণা করে দেখা গেছে: যারা অপেক্ষাকৃত বেশি কৃতজ্ঞ, তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, অমূলক ভয়-ভীতি, অতিরিক্ত খাবার অভ্যাস এবং মদ, সিগারেট ও ড্রাগের প্রতি আসক্তির ঝুঁকি অনেক কম। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে: মানুষকে নিয়মিত আরও বেশি কৃতজ্ঞ হতে অনুপ্রাণিত করলে, মানুষের নিজের সম্পর্কে যে হীনমন্যতা আছে, নিজেকে ঘৃণা করা, নিজেকে সবসময় অসুন্দর, দুর্বল, উপেক্ষিত মনে করা, ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা ৭৬% পর্যন্ত দূর করা যায়।
২০০৯ সালে ৪০১ জন মানুষের উপর গবেষণা করা হয়, যাদের মধ্যে ৪০%-এর ক্লিনিকাল স্লিপ ডিসঅর্ডার, অর্থাৎ জটিল ঘুমের সমস্যা আছে। তাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ, তারা একনাগাড়ে বেশি ঘুমাতে পারেন, তাদের ঘুম নিয়মিত হয়, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন এবং দিনের বেলা ক্লান্ত-অবসাদ কম থাকেন।
নিউইয়র্কের Hofstra University সাইকোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডঃ জেফ্রি ফ্রহ ১০৩৫ জন ১৪-১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর উপর গবেষণা করে দেখেছেন: যারা বেশি কৃতজ্ঞতা দেখায়, তাদের পরীক্ষায় ফলাফল অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো, সামাজিক ভাবে বেশি মেলামেশা করে এবং হিংসা ও মানসিক অবসাদে কম ভোগে।
Wall Street Journal একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছেঃ
Adults who frequently feel gratefulhave more energy, more optimism, more social connections and more happiness than those who do not, according to studies conducted over the past decade. They’re also less likely to be depressed, envious, greedy or alcoholics. They earn more money, sleep more soundly, exercise more regularly and have greater resistance to viral infections.
এক যুগের গবেষণা থেকে দেখা গেছে: প্রাপ্ত বয়স্করা যারা নিয়মিত কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন, তাদের কাজের আগ্রহ, শক্তি বেশি থাকে, তাদের সামাজিক সম্পর্ক বেশি হয়, এবং যারা কৃতজ্ঞ নয়, ওদের থেকে তারা বেশি সুখী অনুভব করেন। তারা অপেক্ষাকৃত কম হতাশা, হিংসা, লোভ বা এলকোহল আসক্ত হন। তারা অপেক্ষাকৃত বেশি আয় করেন, ভালভাবে ঘুমান, নিয়মিত ব্যায়াম করেন, এবং ভাইরাল অসুখের প্রতি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে।
আমরা সহজেই বুঝতে পারি, প্রতিদিন ৫ ওয়াক্তে, কমপক্ষে ১৭ বার বুঝে শুনে এটা বলাটা আমাদের জন্য কতখানি জরুরি—
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন
সমস্ত প্রশংসা এবং ধন্যবাদ আল্লাহর, যিনি সৃষ্টিজগতের প্রভু। [ফাতিহা ১:২]
এখন, আরবিতে প্রশংসার জন্য অনেক শব্দ আছে, যেমন মাদহ্‌, ছানাআ, শুকর। কিন্তু আল্লাহ تعالىসেগুলো থাকতে কেন তাঁর জন্য হামদ শব্দটি বেছে নিলেন?
হামদ শব্দটি একটি বিশেষ ধরণের প্রশংসা। আরবিতে সাধারন প্রশংসাকে মাদহ مدح বলা হয়। এছাড়াও সানাআ ثناء অর্থ গুণগান। শুকর شكر অর্থ ধন্যবাদ দেওয়া। কিন্তু হামদ অর্থ একই সাথে ধন্যবাদ দিয়ে প্রশংসা করা, যখন আপনি কারো গুণে মুগ্ধ। আপনি কারো কোনো বিশেষ গুণকে স্বীকার করে, তার মুল্যায়ন করার জন্য হামদ করেন। হামদ করা হয় ভালবাসা থেকে, শ্রদ্ধা থেকে, নম্রতা থেকে।[১৮] এছাড়াও হামদ করা হয় যখন কারো কোনো গুণ বা কাজের দ্বারা আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আল্লাহর تعالى অসংখ্য গুণের জন্য এবং তিনি আমাদেরকে যে এত অসীম নিয়ামত দিয়েছেন, যা আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করি—তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর প্রশংসা করার জন্য হামদ সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ।
যদি আয়াতটি হতো আল-মাদহু লিল্লাহ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর” —তাহলে কী সমস্যা ছিল? মাদহ অর্থ যদিও প্রশংসা, কিন্তু মাদহ একই সাথে বস্তু এবং ব্যক্তির জন্য করা যায়। মাদহ এমন কারও জন্য করা যায়, যে সেই গুণ নিজে অর্জন করেনি। যেমন আপনি বলতে পারেন, “গোলাপ ফুল খুব সুন্দর।” কিন্তু গোলাপ ফুল সুন্দর হওয়ার পেছনে গোলাপের কোনো কৃতিত্ব নেই। কিন্তু হামদ শুধুমাত্র বুদ্ধিমান, ব্যক্তিত্ববান সত্ত্বার জন্য প্রযোজ্য।
যদি আয়াতটি হতো আছ-ছানাউ লিল্লাহ – “সমস্ত গুণগান/মহিমা আল্লাহর”—তাহলে কী সমস্যা ছিল? ছানাআ হচ্ছে শুধুই কারো কোনো গুণের প্রশংসা করা, যা খুবই সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে কোনো কৃতজ্ঞতা নেই। আমরা শুধুই আল্লাহর تعالى গুণের প্রশংসা করি না। আমরা তাঁর প্রতি একই সাথে কৃতজ্ঞ।
তাহলে আয়াতটি আশ-শুকরু লিল্লাহ – “সমস্ত ধন্যবাদ আল্লাহর”—হলো না কেন? আমরা কাউকে ধন্যবাদ দেই শুধুই যখন কেউ আমাদের কোনো উপকার করে। আল্লাহর تعالى বেলায় সেটা প্রযোজ্য নয়। আমরা আল্লাহর تعالى হামদ সবসময় করি। হঠাৎ করে কোটিপতি হয়ে গেলেও করি, আবার ক্যানসার ধরা পড়লেও করি। এছাড়াও শুক্‌র করা হয় যখন আপনি কারো কাছ থেকে সরাসরি উপকার পান। কিন্তু হামদ করা হয় যখন উপকারটি শুধু আপানাকে না বরং আরও অনেককে প্রভাবিত করে। যেমন, কেউ আপনাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো: আপনি থাকে ‘শুকরান’ বলে ধন্যবাদ দিলেন। কিন্তু আল্লাহ‌ শুধু আপনাকে একগ্লাস পানিই দেননি, বিশাল সমুদ্র দিয়েছেন ৬০০ কোটি মানুষের জন্য পানি ধারণ করার জন্য। সূর্য দিয়েছেন যাতে সূর্যের তাপে সেই পানি বাস্প হয়ে বিশুদ্ধ রূপে মেঘে জমা হয়। তারপর শীতল বায়ু দিয়েছেন যাতে সেই মেঘ ঘন হয়ে একসময় বৃষ্টি হয়। তারপর মাটির ভেতরে পানি জমার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে সেই পানি বিশুদ্ধ অবস্থাতেই শত বছর জমা থাকে। তারপর সেই বিশুদ্ধ পানি বের হয়ে আসার জন্য ঝর্ণা, নদী, পুকুর দিয়েছেন, যাতে আপনি সহজেই সেই বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন। এসবের জন্য আল্লাহকে تعالى শুধু ‘ধন্যবাদ আল্লাহ্‌’ বললে সেটা আল্লাহর অবদানকে অনেক ছোট করে দেখা হবে। সুতরাং শুকর বা ধন্যবাদ ছোট একটা ব্যাপার, এটা আল্লাহর تعالى জন্য উপযুক্ত নয়।

رَبِّ الْعَالَمِين
যিনি সৃষ্টিজগতের প্রভু

‘রব’ শব্দটির যথার্থ অনুবাদ করার মত বাংলা বা ইংরেজি শব্দ নেই, কারণ ‘রব’ অর্থ একই সাথে মালিক, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি, সযত্নে পালনকর্তা, অনুগ্রহ দাতা, রক্ষক।  রব-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: কোনো কিছুর মঙ্গল-অমঙ্গলের দিকে লক্ষ্য রেখে ধীরে যত্নের সাথে তাকে অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে দেওয়া।[১৮] যেমন: আমরা বাচ্চাদের লালন-পালন করি, তাদের জন্য যা ভালো সেটা করি, যা খারাপ তা থেকে দূরে রাখি, যেন তাড়া বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
রব-এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেন। একজন দাসের তার প্রভুর কাছ থেকে প্রথম যেই জিনিসটা চাওয়ার আছে তা হলো: তাকে কী করতে হবে? প্রভু যদি দাসকে না বলে কী করতে হবে, তাহলে দাস বুঝবে কীভাবে তাকে কী করতে হবে এবং কী করা যাবে না?
তবে প্রভু-দাস এই শব্দগুলো সম্পর্কে আমাদের মনে কোনো ভালো ধারণা নেই। প্রভু শব্দটা শুনলেই আমাদের মনের কোনোয় এক খান্দানি মোচ ওলা, অত্যাচারী জমিদারের ছবি ভেসে উঠে। আর দাস বলতে আমরা সাধারণত দুর্বল, না খাওয়া, অভাবী, অত্যাচারিত মানুষের কথা ভাবি। আমাদের মনে যেন এধরনের কোনো ধারণা না আসে, সেজন্য পরের আয়াতটি আমাদেরকে পরিষ্কার করে দিচ্ছে আল্লাহ تعالى কেমন দয়ালু প্রভু।
আল-আ’লামি-ন শব্দটির দু’ধরনের অর্থ হয়: ১)সকল সৃষ্টি জগত, ২)সকল জাতি। আল-আ’লামি-ন শব্দটি আলআ’-লাম العالم এর বহুবচন, যার অর্থ: জগত। এখন আলআ’-লাম العالم এর দুটি বহুবচন আছে: আল আ’লামি-ন العالمين —যার অর্থ সকল চেতন/বুদ্ধিমান জাতি (মানুষ, ফেরেশতা, জ্বিন, এলিয়েন, …), আর আল আ’ওয়া-লিম العوالم —যা আল্লাহ تعالى ছাড়া সকল সৃষ্টি জগত, চেতন বা অচেতন (জড়), দুটোই নির্দেশ করে।[২০][২২]
এখন প্রশ্ন আসে, কেন আল্লাহ تعالى আল আ’ওয়া-লিম ব্যবহার না করে, আল-আ’-লামি-ন ব্যবহার করলেন? তিনি কি সকল চেতন এবং অচেতন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা নন?
সুরা ফাতিহা হচ্ছে চেতন সৃষ্টির জন্য একটি পথ নির্দেশ। এই সূরার মাধ্যমে বুদ্ধিমান সৃষ্টিরা আল্লাহর تعالى কাছে পথ নির্দেশ চায় এবং আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করে। আপনার গাড়িটির সুরা ফাতিহার কোনো দরকার নেই, কারণ তার আল্লাহর কাছ থেকে পথনির্দেশ পাবার দরকার নেই। বরং আপনার এবং আপনার ড্রাইভারের আল্লাহর কাছ থেকে পথনির্দেশ পাওয়াটা বড়ই দরকার, যাতে করে আপনারা বুঝে শুনে রাস্তায় একজন বিবেকবান মানুষের মত গাড়ি চালান।[১]
এছাড়াও আভিধানিকভাবে আ’লামি-ন শব্দটি এসেছে ع ل م মুল থেকে, যার অর্থ: ‘জ্ঞান’, যা দ্বারা কোনো কিছু জানা যায়, অর্থাৎ সৃষ্টিজগত। কারণ আমরা আল্লাহর تعالى সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি সৃষ্টিজগত থেকে। আর এই সৃষ্টিজগতই আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত করে। একটা মোবাইল ফোন দেখলে আপনি যেমন নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন: এটা প্রযুক্তিতে অগ্রসর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী বানিয়েছে, তেমনি আকাশের সূর্য, রাতের আকাশে লক্ষ কোটি তারা, বিশাল সমুদ্র, কোটি প্রজাতির কীটপতঙ্গ, কোটি প্রজাতির গাছ, লক্ষ প্রজাতির মাছ, লক্ষ প্রজাতির পাখি—এই সবকিছু দেখলে আপনি বুঝতে পারেন: এক অকল্পনীয় জ্ঞানী, প্রচন্ত ক্ষমতাবান এবং অত্যন্ত সৃজনশীল একজন সত্ত্বা রয়েছেন, যিনি এত কিছু বানাতে পারেন এবং এত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারেন।








তাহাজ্জুত সলাতের আগে নবী মুহাম্মদ (সা:) যে দোয়া পড়তেন।
দোয়া ও যিকির Doa and Zikir (Hisanul Muslim)
কুরআনের তাফসীর (word by word)
আল-হাদিস ডাউনলোড করুন 
"বাংলা হাদিস" download করুন
দ্বীনের ডাকের সকল পোষ্ট

আরো দেখুন :

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]






বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ ফেইসবুকে শেয়ার করুন   টুইটারে টুইট   প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন...