মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

প্রশ্নোত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) এর জীবনী (পর্ব ১-৮, প্রশ্ন ১-১৪৩)



          ♥♥প্রশ্নোত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) এর জীবনী ♥♥


                                         ♦( পর্ব-১)♦

                       ♣মহানবী (সা-এর শৈশব ও যৌবন

 ১। প্রশ্ন: বাল্যকালে মুহাম্মাদ (সা) কী করতেন ?

উত্তর: বাল্যকালে তিনি অধিকাংশ সময় ভেড়া চড়াতেন।


২। প্রশ্ন: তিনি কি কখনও তাঁর বয়সী কোন ছেলে-মেয়েদের  সাথে কোন বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন ?

উত্তর : তিনি দুষ্টামিপূর্ণ কোন কিছুই কখনই করেন নি এবং তাঁর বয়সী ছেলে-মেয়েরা যেসব খেলাধূলা করত তাতেও তিনি অংশ নিতেন না।


৩। প্রশ্ন: আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তিকালের পর কে মুহাম্মাদ (সা)-এর দেখাশুনা করেন ?

উত্তর : তাঁর চাচা আবু তালিব

৪। প্রশ্ন: কখন ও কার সাথে মুহাম্মদ (সা) সিরিয়া ভ্রমণ করেন ?

উত্তর: যখন তাঁর বয়স বার বছর তখন তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের সঙ্গে সিরিয়া ভ্রমণ করেন।

৫। প্রশ্ন: সফর কালে কোন বিশেষ ঘটনা ঘটেছিলো ?

উত্তর : কাফেলা যখন বুসরা নামক জায়গায়  পৌছলো তখন বুহাইরা নামক এক সন্ন্যাসী তাদেরকে গাছের নিচে আশ্রয় নিতে দেখল। এরপর বুহাইরা আবু তালিবকে বলল তোমার ভাতিজা সকল মানবজাতির নেতা হবে। তাঁকে আল্লাহ এমন এক ঐশী বাণী দান করবেন, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য হবে পথ ও পাথেয়। বুহাইরা আবূ তালিবকে আরো বললেন যে, আপনি মুহাম্মাদের ভালোভাবে দেখাশুনা করবেন কারণ ইহুদিরা তার ক্ষতি করতে পারে। এজন্য আবু তালিব তাঁকে মক্কায় পাঠিয়ে দেন।

৬। প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার কখন মুহাম্মাদ (সা) সিরিয়া সফর করেন এবং কেন ?

উত্তর : যখন তার বয়স ২৫ বছর তখন তিনি খাদীজা (রা)-এর ব্যবসায়িক কাজে দ্বিতীয়বার মতো সিরিয়া যান।

৭। প্রশ্ন: খাদিজা (রা)-কে ছিলেন ?

উত্তর : খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ ছিলেন আরবের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী।

৮। প্রশ্ন: বিয়ের জন্য খাদিজা (রা) কেন মুহাম্মদ (সা)-কে বেশী পছন্দ করলেন ?

উত্তর: মুহাম্মাদ (সা)-এর সত্যবাদিতা এবং সদ্ব্যবহারই খাদিজা (রা)-কে আকৃষ্ট করেছে।

৯। প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা)-কে তিনি কখন বিয়ে করেন ?

উত্তর : যখন তাঁর বয়স চল্লিশ তখন তিনি মুহাম্মাদ (সা)-কে বিয়ে করেন।

১০। প্রশ্ন: তখন মুহাম্মাদ (সা)-এর বয়স কত ছিলো ?

উত্তর : ২৫ বছর

১১। প্রশ্ন: তাঁদের বিয়ের মোহরানা কত ছিলো ?

উত্তর : ২০টি উট।

১২। প্রশ্ন: খাদিজা (রা) –এর বৈবাহিক অবস্থা কি ছিলো ?

উত্তর : তিনি ছিলেন বিধবা নারী। মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্বামী।

১৩। প্রশ্ন: খাদিজা (রা) ও মুহাম্মাদ (সা) এর মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক কেমন ছিলো ?

উত্তর : অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছিলো

১৪। প্রশ্ন:  বিয়ের পর মুহাম্মাদ (সা)-কি ব্যবসায়িক সফরে গিয়েছেন ?

উত্তর : না, বিয়ের পর তিনি কোন ব্যবসায়িক সফরে যান নি।

১৫। প্রশ্ন: খাদিজা (রা) জীবিত থাকাকালীন মুহাম্মাদ (সা) আর কাউকে বিয়ে করেছিলেন ?

উত্তর : না।

১৬। প্রশ্ন: সমাজে মুহাম্মাদ (সা) কে তখন মানুষ কি বলে জানত ?

উত্তর : আল-আমীন (বিশ্বস্ত)।

১৭। প্রশ্ন : তিনি কি কোন ধরণের শিক্ষা পেয়েছেন ? বা তিনি কি পড়াশুনা করেছেন ?

উত্তর  না: তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা পাননি। তিনি ছিলেন নিরক্ষর।

১৮। প্রশ্ন: কিশোর বয়সে  তিনি (সা) যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন  সেটির নাম কি ?

উত্তর : রাসূল (সা)-এর বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর তখন তিনি ‘ফিজর’ নামক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যা সংগঠিত হয়েছিলো কুরাইশ ও বানু কিননাহ এবং কুরাইশ আইলানের মাঝে।

১৯। প্রশ্ন: খাদিজা গর্ভে মুহাম্মদ (সা) এর কতজন ছেলেমেয়ে জন্মলাভ করেছিলো ?

উত্তর:   খাদিজার গর্ভে মুহাম্মাদ (সা)-এর দু’জন ছেলে ও চারজন মেয়ে জন্মলাভ করেন।

♣নিম্নে তাদের নাম উল্লেখ করা হলো:♣

♥কাসিম তিনি শৈশবে ইন্তিকাল করেন।
♥আবদুল্লাহ, যাকে তাইয়্যেব ও তাহির বলা হতো, তিনিও শৈশবে ইন্তিকাল করেন।
♥যাইনাব, আবুল আসের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো।
♥রুকাইয়া,প্রথমে আবু লাহাবের ছেলে উতবার সঙ্গে বিয়ে হয়, পরবর্তীতে উসমান বিন আফফান (রা)-এর সঙ্গে বিয়ে হয়।
♥উম্মে কুলসুম, প্রথমে আবু লাহাবের ছেলে উতাইবার সঙ্গে বিয়ে হয়, পরবর্তীতে রুকাইয়ার ইন্তিকালের পর উসমান বিন আফফান এর সঙ্গে বিয়ে হয়।
♥ফাতিমা আয-যাহারা আলী বিন আবু তালিবের সঙ্গে বিয়ে হয়।

২০। প্রশ্ন: রাসূল (সা) এর চাচাদের নাম কি ছিলো ?

উত্তর : তারা হলেন : হারিস, যুবাইর, আবু তালিব, হামযাহ (রা), আবু লাহাব, খিযাক, যাকওয়ান, সাফার ও আব্বাস (রা)

২১। প্রশ্ন: নবুওয়াতের পূর্বে রাসূল (সা) “হিলফুল ফুযুল” নামাক যে সংগঠনে যোগদান করেন সেটির লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তর : হিলফুল ফুযুলের লক্ষ্য উদ্দ্যেশ্য ছিলো অসহায়দের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং অবিচার ও সহিংসতা দমন করা।

২২। প্রশ্ন: রাসূল (সা) এর মা আমিনার ইন্তিকালের পর তিনি যাদের ‘মা’ বলে ডাকতেন তারা কারা?

উত্তর: তারা হলেন : ১. হালিমা আস-সাদিয়া, তাঁর দুধ মা। ২. উম্মে আইমান, যিনি ছিলেন তার বাবার দাসী আর তিনিই রাসূলের বেশী দেখাশুনা করতেন। ৩. ফাতিমা বিনতে আসাদ, যিনি ছিলেন তা চাচী। আবু তালিবের স্ত্রী।

২৩। প্রশ্ন: কুরআনে ‘মুহাম্মদ’ শব্দটি কতবার এসেছে ?

উত্তর : সর্বমোট চারবার।

২৪। প্রশ্ন: ইঞ্জিলে (বাইবেলে) রাসূল (সা)-কে কি নামে উল্লেখ করা হয়েছে ?

উত্তর: ‘ফারকালীত’ ‘পারাক্লীত’ নামে। এর অর্থ সহায়,পয়গম্বর, দিশারী আত্মা, নবী ,রাসূল।

২৫। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর মামা কারা ছিলেন ?

উত্তর : তারা হলেন : বনী যুহরা ও বনী আদি বিন নাজ্জার।

২৬। প্রশ্ন : নবুওয়্যাতের পূর্বে তিনি (সা) কার পথ অনুসরণ করতেন ?

উত্তর : নবী ইবরাহীম (আ)-এর ।

২৭। প্রশ্ন: তাঁর চাচা আবু তালিব কি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তর : না, তিনি ইসলাম কবুল করেন নি। তিনি একজন মুশরিক হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন।

২৮। প্রশ্ন : নবী (সা)-এর ডাক নাম কি ছিলো ?

উত্তর : আবুল কাসিম।

২৯। প্রশ্ন: যখন কারো সামনে ‘মুহাম্মাদ (সা)’ এর উল্লেখ করা হয় তখন কি বলা উচিত?

উত্তর: তখন ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা উচিত। 

                 ♦(পর্ব -৩)♦


♣♣কা’বা সংস্কার ও সালিস-নিষ্পত্তি♣♣

৩০। প্রশ্ন: কুরাইশরা যখন কাবা সংস্কারের উদ্যোগ নেন তখন রাসূল (সা)-এর বয়স কত ছিল ?

উত্তর : ৩৫ বছর


৩১। প্রশ্ন: কা’বা মানে কি ?

উত্তর : কা’বা শব্দের অর্থ হল উঁচু স্থান, এটি পৃথিবীর প্রাচীন সবচেয়ে পুরনো মাসজিদ।


৩২। প্রশ্ন:  পবিত্র কা’বার আর কি কি নাম রয়েছে ?

উত্তর : বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর ), বায়তুল আতীক (পুরনো ঘর ), মাসজিদুল হারাম (পবিত্র মাসজিদ ) হারামে ইবরাহীম (ইবরাহীম (আ)-এর তৈরী ইবাদাত গৃহ )।


৩৩। প্রশ্ন: কাবা শরীফ কে নির্মান করেন ?

উত্তর : নাবী ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ) আল্লাহর হুকুমে তাঁর ইবাদাতের জন্য এটি নির্মান করেন।


৩৪। প্রশ্ন : কুরাইশরা কেন কা’বা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিল ?

উত্তর : কারণ কা’বা ঘর যে পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল, সেগুলো বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় এবং ছাদশূন্য হয়ে ভিতরের সবকিছু প্রকাশ হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা কা’বা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন।


৩৫। প্রশ্ন: কাবা ঘরের উচ্চতা কত ছিল ?

উত্তর : ইহার উচ্চতা ছিল ৬.৩০ মিটার।


৩৬। প্রশ্ন: কা’বা সংস্কারের জন্য কোন ধরণের টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা ?

উত্তর : শুধুমাত্র হালাল বা বৈধ অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া অন্য সকল অর্থ যেমন- অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ, সুদের টাকা ও বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জিত টাকা প্রত্যাহার করা হয়।


৩৭। প্রশ্ন: কাবার দেওয়াল ভাঙ্গার কাজ কে শুরু করেন ?

উত্তর : ওয়ালী বিন মুগীরাহ মাখযুমি।


৩৮। প্রশ্ন: কুরাইশরা কাবার দেয়াল ভাঙতে কেন ভয় পাচ্ছিল ?

উত্তর : তারা ভেবেছিল কোন অলৌকিক আযাব এসে তাদের গ্রাস করবে।


৩৯। প্রশ্ন: সংস্কারের কাজটি তারা কীভাবে ব্যবস্থা করলেন ?

উত্তর: তারা বিভিন্ন গোত্রের মাঝে কাজ ভাগ করে দিলেন। তাই কা’বা সংস্কার প্রতিটি গোত্রেরই বিশেষ ভূমিকা ছিল।


৪০। প্রশ্ন: যিনি পাথর গেথেছিলেন তার নাম কি?

উত্তর: বাকুম। একজন রোমান স্থপতি বা রাজমিস্ত্রিী।


৪১। প্রশ্ন : কীভাবে কাজ চলছিল ?

উত্তর : ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরের কাছে আসা পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই কাজ করছিল।


৪২। প্রশ্ন: ‘হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর কী ? কাবা শরীফের দেয়ালে এটি  কে স্থাপন করেন ?

উত্তর: এটি হল একটি বিশেষ এবং চমতকার পাথর। কতিপয় ঐতিহাসিকের মতে, এ পাথরটি জান্নাত থেকে আনা হয়, আর এটি প্রথমে ছিল সাদা পরবর্তীতে কোন এক পাপিষ্ঠ লোকের স্পর্শে কালো হয়ে যায়। এ পবিত্র পাথরটি কা’বার দেয়ালে স্থাপন করেন নাবী ইবরাহীম (আ)।


৪৩। প্রশ্ন: এটি কাবা শরীফের দেয়ালে লাগানো হয় কেন ?

উত্তর : হজ্জ যাত্রীরা যেন এখান থেকে তাদের ‘তাওয়াফ” শুরু এবং এখানে এসে শেষ করতে পারে। তাদের জন্য এটি একটি নিদর্শনস্বরূপ।


৪৪। প্রশ্ন: বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে কী বিরোধ দেখা দিল এবং কেন ?

উত্তর : ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে রাখা হয়েছিল এবং প্রত্যেক গোত্রই চেয়েছিল এটি ক উত্তোলন করে যথাস্থানে স্থাপনের গৌরব আর্জন করতে।


৪৫। প্রশ্ন: বিরোধটি কত দিন পর্যন্ত ছিল ?

উত্তর : চার-পাঁচদিন যাবত বিরোধটি বিদ্যমান ছিল।


৪৬। প্রশ্ন: সামাজিক এ বিরোধ সমাধানের জন্য  কে পরামর্শ দেন ?

উত্তর: আবু উমাইয়াহ, তিনি ছিলেন কুরাইশদের একজন প্রবীণ নেতা।


৪৭। প্রশ্ন: তিনি কী পরামর্শ দিলেন এবং অন্যান্য অন্যান্য গোত্র প্রধানরা কি তার পরামর্শে একমত ছিল ?

উত্তর: তিনি বললেন, আগামী কাল সকাল বেলা সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি প্রাঙ্গনে আসবে, তাকে দিয়েই এ গোলযোগ সমাধা করা হবে। তার এ পরামর্শে অন্যান্য গোত্র প্রধানরাও রাজি হয়ে গেল। এরপর সবাই সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে অপেক্ষা করছিল।


৪৮। প্রশ্ন: পরের দিন সকালবেলা সর্বপ্রথম কা’বা প্রাঙ্গনে কে প্রবেশ করেন ?

উত্তর : বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা) ছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।


৪৯। প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা) কে দেখে লোকেরা কী বলাবলি করতে লাগলো ?

উত্তর: লোকেরা বললো, এ তো দেখছি আমাদের মুহাম্মদ সেতো সত্যবাদী এবং বিশ্বাসভাজন, তাকে আমরা বিশ্বাস করি। সুতরাই তাকেই সমস্যাটি সমাধান করতে  দেয়া হোক।


৫০। প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা) কিভাবে বিরোধটি সমাধান করলেন ?

উত্তর : তিনি বড় এক টুকরা কাপড়েরর উপর হাজরে আসওয়াত বা কালো পাথরটি রাখলেন। তারপর তিনি সকল গোত্র প্রধানদের ডাকলেন এবং পাথরসহ কাপড়টি নিয়ে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বললেন। এরপর বিশ্বনবী (সা) নিজ হাতে পাথরটি তুলে যথাস্থানে স্থাপন করলেন।


৫১। প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা) কেন ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর চুম্বন করতেন ?

উত্তর : ইবরাহীম ও ইসমাঈল (সা)-এর পবিত্র হাত ঐ পাথর স্পর্শ করেছিল বলেই তিনি যখন কা’বা ঘর ‘তাওয়াফ’ করতেন তখনই ঐ পাথর চুম্বন করতেন।


৫২। প্রশ্ন: ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর চুম্বন অথবা স্পর্শ করা কি ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত ?

উত্তর : না, এটি কোন ইবাদত নয় বংর আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী এটি একটি বিশেষ ভক্তি প্রদর্শনমাত্র।


৫৩। প্রশ্ন: ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর চুম্বন করতে গিয়ে উমার বিন খাত্তাব (রা) কী বলেছিলেন ?

উত্তর : আমি জানি, তুমি একটি পাথরমাত্র আর কিছুই নও। কারো কোনো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই। আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তেমাকে স্পর্শ করতে এবং চুম্বন করতে । যদি না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে স্পর্শ এবং চুম্বন করতাম না। ( সহীহ বুখারী, দ্বিতীয় খন্ড-এর হজ্জ পর্ব, অধ্যায় ৫৬, হাদীস নং-৬৭৫ )।


৫৪। প্রশ্ন : হাজ্জ যাত্রী বা হাজীদের জন্য কি ‘কালো পাথর’ চুম্বন করা কী বাধ্যতামূলক ?

উত্তর : না, হাজ্জ যাত্রীদের জন্য ‘কালো পাথর’ চুম্বন বাধ্যতামূলক নয়। প্রচন্ড ভীড়েরর সময় অন্যের অসুবিধা সৃষ্টি না করে বরং দূর থেকে হাতে নির্দেশ করা বা স্পর্শ করাই যথেস্ট।


                       ♦(পর্ব-৪)♦

♣রাসূল (সা)-এর উপর ওয়াহী নাযিল♣

 ৫৫। প্রশ্ন: ওয়াহীর সূচনালগ্নে রাসূল (সা) কোথায় যেতেন ?

উত্তর: তিনি হেরা গুহায় নির্জন স্থানে গিয়ে ইবাদাতের মধ্যে সময় কাটাতেন।

৫৬। প্রশ্ন: ‘হেরা গুহা’ কোথায় অবস্থিত ?

উত্তর : এটি মক্কা থেকে দুই মাল দূরে হেরা পর্বতে অবস্থিত। এ হেরা পর্বতকে নূরের পাহাড়ও বলা হয়।

৫৭। প্রশ্ন: হেরা গুহার আয়তন কত ?

উত্তর : এটি দৈর্ঘ্য ৪ গজ এবং প্রস্থ ১.৭৫ গজ।

৫৮। প্রশ্ন : তিনি কেনো সেখানে গমন করতেন ?

উত্তর : সৃষ্টি জগতের ওপর ধ্যান করতে যেতেন। অর্থ্যাত সেখান গিয়ে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন।

৫৯। প্রশ্ন: তিনি সেখানে কতদিন ছিলেন ?

উত্তর : কয়েক রাত তিনি সেখানে অতিবাহিত করেন।

৬০। প্রশ্ন: ওহীর সূচনা হয় কিসের মাধ্যমে ?

উত্তর : সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, দিনের বেলা তা সত্য হয়ে দেখা দিত।

৬১।  প্রশ্ন: এ অবস্থা কতদিন চলছিল ?

উত্তর : প্রায় ছয় মাস যাবত এভাব চলছিল।

৬২। প্রশ্ন: কখন সর্বপ্রথম রাসূল (সা)-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয় ?

উত্তর : ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগষ্ট, ২১ রমযান সোমবার রাতে সর্বপ্রথম ওয়াহী নাযিল হয়। তখন রাসূল (সা)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

৬৩। প্রশ্ন: কে ওয়াহী নিয়ে এসেছিলেন ?

উত্তর : জিবরাঈল (আ)

৬৪। প্রশ্ন: জিবরাঈল (আ) কে ?

উত্তর : তিনি হচ্ছেন প্রধান ফেরেশতা, তিনি নবীদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিতেন। তাকে রুহুল কুদ্দুস এবং রুহুল আমীনও বলা হয়।

৬৫। প্রশ্ন: জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-কে কি বললেন এবং রাসূল (সা) কি উত্তর দিলেন ?

উত্তর : তিনি বললেন, “পড়” । তারপর মুহাম্মাদ (সা) বললেন, “আমি তো পড়তে জানি না”।

৬৬। প্রশ্ন: অত:পর জিবরাঈল (আ) কি করলেন ?

উত্তর : জিবরাঈল (আ)  মুহাম্মাদ (সা)কে ধরে বুকের সাথে খুব জোরে চেপে ধরলেন। এমনকি মুহাম্মাদ (সা) ঐ চাপ সহ্য করার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়”। এভাবে তিনি তিনবার মুহাম্মাদ (সা)-কে ধরলেন এবং বললেন, “পড়”।

৬৭। প্রশ্ন: এরপর মুহাম্মাদ (সা) কি পড়তে পেড়েছিলেন ?

উত্তর : হ্যাঁ, তিনি পড়তে লাগলেন-

اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَخَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ

অর্থ: ১. পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। ২. যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রক্তপিন্ড থেকে। ৩. পড় এবং তোমার প্রভু অত্যন্ত মেহেরবান। (সূরা আল-আলাক্ব, আয়াত নং-১-৩)।

 ৬৮। প্রশ্ন: অত:পর রাসূল (সা)-এর অবস্থা কি হয়েছিলো ?

উত্তর : তিনি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন।


৬৯। প্রশ্ন: সেখান থেকে তিনি ফিরে এসে খাদিজা (রা)-কে কী বললেন ?

উত্তর : তিনি খাদিজাকে বললেন, “আমাকে (কম্বল দিয়ে) জড়িয়ে দাও, আমাকে (কম্বল দিয়ে) জড়িয়ে দাও”।

৭০। প্রশ্ন: খাদিজা (রা) কী করলেন ?

উত্তর : কাঁপুনি বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কম্বল দিয়ে তাকে জড়িয়ে রাখলেন।

৭১। প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা) কি খাদিজাকে ঘটনাটি বলেছিলেন ?

উত্তর : হ্যাঁ, তিনি খাদিজাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং বললেন, খাদিজা! আমি এখন আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

৭২। প্রশ্ন: খাদিজা (রা) কী বলে রাসূল (সা)-তে সান্ত্বনা দিলেন ?

উত্তর : খাদিজা বললেন, “আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি একজন সত লোক, আপনি আত্মীয়-স্বজনদের হাক্ব আদায় করেন, অসহায়দের আশ্রয় দেন, গরিব, নি:স্ব ও অভাবীদের সাহায্য করেন। আপনি অতিথিপরায়ণ (বুখারী : প্রথম ওয়াহী অধ্যায় )।

৭৩। প্রশ্ন: এরপর তিনি তাকে কোথায় নিয়ে গেলেন ?

উত্তর : এরপর তিনি রাসূল (সা)-কে নিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে গেলেন। অত্যন্ত বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন ওয়ারাকা। তিনি ছিলেন ধর্মশাস্ত্রে একজন পন্ডিত।


৭৪। প্রশ্ন: ওয়ারাকা বিন নওফেল কী বললেন ?

উত্তর : ওয়ারাকা বিন নওফেল সবকিছু শুনে বললেন, এতো সেই ওহী বহনকারী ফেরেশতা যাকে আল্লাহ তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের কাছেও পাঠিয়েছেন। হায় ! আমি যদি শক্তিশালী যুবক হতাম। হায় ! আমি যদি তখন জীবিত থাকতে পারতাম। যখন আপনার গোত্রের লোকেরা আপনাকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দিবে তখন আমি অবশ্যই সাহায্য করতাম।

৭৫। প্রশ্ন: রাসূল (সা) তখন তাকে কী বললেন ?

উত্তর : মুহাম্মাদ (সা) অবাক হয়ে কী বললেন, “তারা আমাকে কেন বের করে দিবে” ?

৭৬। প্রশ্ন: ওয়ারাকা কী উত্তর দিলেন ?

উত্তর: ওয়ারাকা বললেন, আপনি যা নিয়ে এসেছেন অনুরুপ আপনার পূর্বে যারা এমন কিছু নিয়ে এসেছিলেন তাদের  প্রত্যেকের সাথেই এমন শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছৈ। আমি যদি সেদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে আপনাকে সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য সহযোগীতা করব।


৭৭। প্রশ্ন: ওয়ারাকা কখন ইন্তিকাল করেন ?

উত্তর : অল্প কয়েকদিন পর।


৭৮। প্রশ্ন: কতদিন যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল ?

উত্তর : দীর্ঘ ছয়মাস যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল।


৭৯। প্রশ্ন: হঠাত ওহীর সাময়িক বিরতিতে নাবী (সা) কি অনুভব করলেন ?

উত্তর: তিনি এতটাই কষ্ট অনুভব করলেন যে, অনেক সময় তিনি নিজে নিেজকে পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। কিন্তু সবসময়ই জিবরাঈল এসে হাজির হত এবং বলত : “হে মুহাম্মাদ ! নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্যিকার রাসূল । এর ফলে তার আত্মা প্রশান্ত হতো এবং তিনি শান্তিতে বাড়ি ফিরে যেতেন।

৮০। প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার কি ওহী নাযিল হল ?

উত্তর:  তা হলো :

يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ {1}

قُمْ فَأَنْذِرْ {2}

وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ {3}

وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ {4}

وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ {5}

وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ {6}

وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ {7}

 অর্থ: ১. ( হে মুহাম্মদ সা) কম্বল আবৃতকারী! ২. উঠুন এবং সতর্ক করুন! ৩. আর আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন! ৪. এবং আপনার পোশাক পবিত্র করুন! ৫. পৌত্তলিকতা পরিহার করে চল, ৬. অধিক পাওয়ার প্রত্যাশায় দান করিও না। ৭. এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে  ধৈর্য ধারণ কর। (সূরা মুদ্দাছছির, আয়াত নং ১-৭)


৮১। প্রশ্ন: ওহীর প্রকারভেদ গুলো অথবা নিদর্শনগুলো কী ?

উত্তর : ওহীর সাতটি নিদর্শন রয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

সত্য স্বপ্নজিরাঈল (আ) রাসূল (সা)-এর হৃদয়মনে অদৃশ্যভাবে ওহী নিক্ষেপ করতেন।জিরাঈল (আ) অনেক সময় মানুষেরআকৃতিতে রাসুল (সা)-এর কাছে এসে সরাসরি কথা বলতেন।জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-এর নিকট ক্রমাগত ঘন্টা বাজার ধ্বনির মতো আসতেন। আর এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন আকৃত। কারণ জিবরাঈল এসে রাসূলকে এমন শক্তভাবে ধরতেন যে অত্যন্ত প্রচন্ড শীতের দিনেও তার কপাল থেকে ঘাম ঝরতো।রাসূল (সা) জিবরাঈলকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখতেন। আর তিনি রাসূলের কাছে আল্লাহর বাণী নাযিল করতেন।রাসূল (সা) যখন মিরাজে গেলেন তখন আল্লাহ সরাসরি তার ওপর সালাতের নির্দেশ জারি করেন। অর্থ্যাত সালাত ফরয করেন।ফেরেশতার মধ্যস্থতা ছাড়াই সর্বপ্রথম আল্লাহর বাণী তাঁর রাসূলের কাছে পৌছানো হয়।


৮২। প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার ওহী নাযিলের পর রাসূল (সা) কী করলেন ?

উত্তর : তিনি তার পরিবারবর্গ ও বন্ধুদের মাঝে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন।

৮৩। প্রশ্ন: সর্বপ্রথম কারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলো ?

উত্তর: চার জন ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন, তারা হলেন-

রাসূল (সা)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা)রাসূল (সা)-এর ক্রীতদাস যায়িদ বিন হারিছাহরাসূল (সা)-এর চাচাতো ভাই আলী বিন আবু তালিব।রাসূল (সা)-এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আবূ বকর (রা)

৮৪। প্রশ্ন:  আবূ বকর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে আর কারা ইসলাম গ্রহণ করেন ?

উত্তর: তারা হলেন, উসমান বিন আফফন, যুবাইর বিন আওয়াম, আব্দুর রহমান বিন আওফ, সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ এবং সাঈদ বিন যায়িদ (রা)।

৮৫ । প্রশ্ন: সর্বপ্রথম মহিলাদের মধ্যে কারা ইসলাম গ্রহণ করেন ?

উত্তর: তারা হলেন, আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফজল, আবূ বকরের স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস এবং তার মেয়ে আসমা বিনতে আবূ বকর এবং ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (উমারের বোন )।

৮৬। প্রশ্ন: অন্যান্য আর যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তাদের নাম কী ?

উত্তর : তারা হলেন, বিলাল বিন রাবাহ এবং খাব্বাব বিন আরাত (রা)।


                      ♦(পর্ব-৫)♦


      ♣চাঁদ দ্বিখন্ডিত করার মুজিযা♣

৮৭। প্রশ্ন: মু’জিযা কী ?

উত্তর : মু’জিযা হচ্ছে এক অলৌকিক বিষয় যা শুধুমাত্র নবীগণই করতে সক্ষম। তারা নিজেরা তা করতে পারে না বরং আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন তখন তাদেরকে মু’জিযা প্রদর্শনের শক্তি দান করেন। মু’জিযা হচ্ছে নবুওয়াতের একটি নিদর্শন।

৮৮। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর প্রধান মু’জিযা কি ?

উত্তর : আল-কুরআন হচ্ছে রাসূল (সা)-এর প্রদান মু’জিযা, যা মানবজাতির জন্য চিরন্তন ঐশী বাণী।


৮৯। প্রশ্ন: রাসূল (সা) অন্য কোন মু’জিযা দেখিয়েছেন ?

উত্তর : হ্যাঁ, তিনি আরো অনেক মু’জিযা দেখিয়েন কখনও প্রয়োজনে আবার কখনও মানুষের দাবীতে।


৯০। প্রশ্ন: মক্কার কাফিররা রাসূলের কাছে কোন মু’জিযার দাবি করেছিল ?

উত্তর : তারা রাসূলকে চাঁদ দ্বি-খন্ডিত করার দাবি তুলেছিল ।


৯১। প্রশ্ন: কাফিরদের নিয়মিত পীড়াপীড়িতে রাসূল (সা) কী করলেন ?

উত্তর: তিনি তাদেরকে মু’জিযা প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন ।

৯২। প্রশ্ন: রাসূল (সা) চাঁদকে দু’টুকরা করলেন কীভাবে ?

উত্তর: তিনি তাঁর অঙ্গুলি চাঁদের দিকে নির্দেশ করলেন এবং মুহূর্তের মধ্যেই এটি দ্বি-খন্ডিত হয়ে গেল। এরপর পুনরায় এটিকে আগের মতো মিলিয়ে দিলেন।

৯৩। প্রশ্ন: কাফিররা কী এটি দেখেছিল ?

উত্তর: হ্যাঁ, শুধু মক্কার লোকেরাই তা দেখেনি, বরং বিশ্বের অনেক লোকই এটি দেখেছিল ।


৯৪। প্রশ্ন: মক্বার পৌত্তলিকগণ কি ইসলাম গ্রহণ করেছিল ?

উত্তর: না, তারা তাদের অজ্ঞতা ও অহংকারের কারণে ক্রমাগত অবিশ্বাসের মধ্যেই পড়েছিল।


                         ♦(পর্ব-৬)♦


♣ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর কুরাইশদের নির্যাতন♣

৯৫। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর নবুওয়াতের চতুর্থ বছরের শুরুর দিকে তার দাওয়াতী কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য কুরাইশরা কী সিদ্ধান্ত নেয়?

উত্তর: তারা রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও নওমুসলিমদের ওপর নানা ধরণের অত্যাচার নির্যাতন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এজন্য আবু লাহাবের নেতৃত্ত্বে তারা ২৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে এবং আপোষ-মীমাংসার জন্য তারা রাসূলকে পার্থিব-সুখের প্রলোভন দেখায়।

৯৬। প্রশ্ন: মক্বার কুরাইশ নেতারা হজ্ব যাত্রীদের কাছে কী প্রচান করে বেড়াচ্ছিল ?

উত্তর: হজ্জ্বের মৌসুমে রাসূল (সা)-কে তার দাওয়াতী কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য তার হজ্জযাত্রীদের মাঝে প্রচার করতে লাগলো যে, মুহাম্মাদ (সা) একজন যাদুকর, সে পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-বোনে এবং স্বামী-স্ত্রীতে বিচ্ছেদ ঘটাতে খুবই পারদর্শী।

৯৭। প্রশ্ন: ইসলাম গ্রহণের পর উসমান বিন আফফানের চাচা তার সাথে কী করলো ?

উত্তর: সে তাঁকে খেজুর পাতার মাদুরে মুড়িয়ে তার নিচে আগুন লাগিয়ে দিলো।

৯৮। প্রশ্ন: ইসলাম গ্রহণের কারণ মুসআব বিন উমাইর (রা)-এর মা তার সাথে কেমন আচরণ করেছিলো?

উত্তর: সে তাকে অনাহারে রাখতো এবং অবশেষে বাড়ি থেকেই বের করে দিলো।

৯৯। প্রশ্ন: উমাইয়া বিন খালফ বিলাল (রা)-এর উপর কীভাবে নির্যাতন করতো ?

উত্তর: বিলাল ছিলেন উমাইয়া বিন খালফের ক্রীতদাস। তাই সে প্রায়ই বিলালকে মারধর করতো। অনেক সময় সে তার গলায় রশি বেঁধে উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদেরকে দিয়ে মক্বার গলিতে গলিতে তাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে ঘুরে বেড়াতো। আবার অনেক সময় তার হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে দিয়ে তার বুকের উপর ভারি পাথর দিয়ে রাখত।

১০০। প্রশ্ন : ইয়াসির এবং তার পরিবারবর্গকে কীভাবে নির্যাতন করা হতো ?

উত্তর: ইয়াসির, সুমাইয়া এবং আম্মার (রা)-কে জ্বলন্ত আংগারের উপর এবং উত্তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে তাদেরকে মারধর করা হতো ।

১০১। প্রশ্ন: ইয়াসির কীভাবে শহীদ হন ?

উত্তর: নির্মম নির্যাতনের ফলে তিনি শহীদ হন।

১০২। প্রশ্ন: সুমাইয়া কীভাবে শহীদ হন ?

উত্তর: আবু জেহেল স্বয়ং বর্শার আঘাতে সুমাইয়াকে হত্যা করে। আর এভাবে তিনি ইসলামে প্রথম মহিলা শহীদ হওয়ার উপাধি অর্জন করেন।

১০৩।  প্রশ্ন: আম্মার বিন ইয়াসিরও কি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন ?

উত্তর: হ্যাঁ, তিনিও নানা ধরণের নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন।

১০৪। প্রশ্ন: ইসলাম গ্রহণ করার কারণে যেসব মহিলারা নির্যাতিত হয়েছিলেন তারা কারা ?

উত্তর: তারা হলেন যানাইরা, নাদিয়া এবং তার মেয় উম্মে উবাইস (রা) সহ আরো অনেকে।

১০৫। প্রশ্ন: খাব্বাব বিন আরাত (রা)-এর সঙ্গে মক্বার মুশরিকরা কী করতো ?

উত্তর: তারা খাব্বাবের চুল ধরে টানত এবং তার গলায় রশি বেঁধে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে দিত এবং যে যেন পালাতে না পারে সে জন্য তার বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রাখতো।


                  ♦(পর্ব-৮)♦


   ♣ইসলামের চরমশত্রু আবু জাহেল♣

১০৬। প্রশ্ন: আবু জাহেল কে ?

উত্তর: আবু জাহেল ছিলেন কুরাইশদের বড় নেতা।

১০৭। প্রশ্ন: তার প্রকৃত নাম কি ছিলো ? তাকে আবু জাহেল বলা হয় কেনো ?

উত্তর : তার প্রকৃত নাম ছিল উমর বিন হিশাম, তার উপনাম ছিল আবুল হাকাম। কিন্তু ইসলামের প্রতি তার শত্রুতাপূর্ণ আচরণের জন্য তাকে আবু জাহেল বলা হতো।

১০৮। প্রশ্ন: আবু জাহেল কেনো রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরোধিতা করতেন ?

উত্তর : কারণ, রাসূল (সা) মুর্তিপূজাকে ঘৃণা করতেন এবং আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহীদের) দাওয়াত দিতেন।

১০৯। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর সাথে তার আচরণ কেমন ছিলো ?

উত্তর: সে রাসুল (সা)-এর সাথে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করতো। অধিকাংশ সময়ে সে রাসূলকে অপমান করতো, গালি-গালাজ করতো, এমনকি মৃত্যুর হুমকি দিতো। রাসূল (সা)-কে বিরক্ত করার জন্য সে মানুষকে উস্কানি দিতো। আর সে একমাত্র ব্যক্তি যে বিভিন্ন গোত্রের লোকজনকে একত্রিত করে রাসূল (সা)-কে হত্যার প্রস্তাব করেছিলো।

১১০। প্রশ্ন: কোথায় তাকে হত্যা করা হয় ?

উত্তর: বদর যুদ্ধে দু’জন আনসার তরুণ তাকে হত্যা করে।

১১১। প্রশ্ন: পরবর্তীতে তার যে ছেলে ইসলাম গ্রহণ করে তার নাম কী ?

উত্তর: ইকরিমা বিন আবু জাহেল (রা)।

১১২। প্রশ্ন: নওমুসলিমদের সাথে আবু জাহেল কি করত ?

উত্তর: সে যখন শুনত, কোন সম্ভ্রান্ত  বংশের উচ্চমর্যদাসম্পন্ন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে তখনই তাকে সে অপদস্ত করার চেষ্টা করত, গোপনে তার বদনা করত এবং তাকে কঠিন পরিণতির ভয় দেখাতো। আর নওমুসলিম যদি সামাজিকভাবে দুর্বল হতো, সে তাকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করতো এবং তাকে কঠোর নির্যাতনের উপর রাখতো।

১১৩। প্রশ্ন: আবু জাহেল কীভাবে রাসূল (সা)-এর জীবননাশের চেষ্টা করেছিলো ?

উত্তর : একবার আবু জাহেল কুরাইশদের সম্বোধন করে বললেন, “হে কুরাইশগণ! মুহাম্মাদ যেভাবে আমাদের ধর্মের ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়, আমাদের পূর্বপুরুষদের অবমাননা করে, আমাদেরকে বিপথগামী বলে এবং আমাদের দেবতাদের গালি দেয়, মনে হচ্ছে এ জন্য সে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। আমি শপথ করছি তার এ অপকর্ম থেকে তোমাদের মুক্তি দেয়ার জন্য আমি ভারি পাথর নিয়ে সে যখন সালাত পড়বে তখন তার মাথায় ঐ পাথর নিক্ষেপ করবো। তার আনিত ধর্মের ব্যাপারে আমি মোটেও শংকিত নই। আশা করি বনী আবদে মানাফের লোকেরা আমার সাথে একমত”। সবাই তার কথায় রাজি হয়ে গেল এবং তার কথানুযায়ী কাজ করার জন্য তাকে উত্সাহিত করল।

পরের দিন সকালবেলা আবু জাহেল রাসুল (সা)-এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। রাসূল (সা) সালাতে দাঁড়ানোর পর তাকে হত্যা করার জন্য আবু জাহেল পাথর নিয়ে অগ্রসর হতে লাগলো। রাসূল (সা)-এর নিকট আসনে না আসতেই পাথরটি তার হাত থেকে পড়ে যায় এবং সে বিবর্ণ চেহার নিয়ে ফিরে আসে। লোকেরা এ দৃশ্য দেখে তাড়াতাড়ি তার কাছে এসে এ ব্যাপারটি সম্পর্কে জানতে চায়। সে বলল, “যখন আমি তার নিকটবর্তী হলাম, বিশাল একটা উট ভয়ংকর দাঁত নিয়ে গতিরোধ করল এবং আমাকে প্রায় খেয়ে ফেলেছিল। পরে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এটা ছিল জিবরাঈল! আবু জাহেল যদি আরেকটু অগ্রসর হত তাহলে সে তাকে মেরে ফেলত।

১১৪। প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মানুষদের কাছে দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন আবু জাহেল কী করলেন ?

উত্তর: সে রাসুল (সা)-এর মাথায় ময়লা নিক্ষেপ করল এবং মানুষদেরকে বলল, “তোমরা তার কথা শুনবে না। সে তোমাদেরকে লাত, মানাত এবং উযযার পূজা থেকে বিরত রাখতে চায়”। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চলার পথে পাথর ও ময়লা নিক্ষেপ করতো।

১১৫। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে হত্যার জন্য আবু জাহেল অন্য আরেকটি দিনে কী করেছিলো ?

উত্তর: একবার সে শপথ করল যে, সে রাসূল (সা)-এর মুখমন্ডলে ময়লা নিক্ষেপ করবে এবং পা দিয়ে তার গলা চেপে ধরবে। একাজ করার জন্য সে সামনে অগ্রসর হয়ে হঠাত ফিরে আসল এবং হাত দিয়ে নিজেকে কোন জিনিস থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তাকে জিজ্ঞেষ করা হলে সে বললো, “আমি একটি আগুনের পরিখা ও কিছু ডানা দেখতে পেলাম”। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “সে যদি আরেকটু অগ্রসর হতো তাহলে জিবরাঈল তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো একের পর  এক ছিন্ন ভিন্ন করে দিতো”।


                      ♦(পর্ব-৯)♦


  ♣ইসলামের চরম শত্রু  আবু লাহাব ও উকবা♣

১১৬। প্রশ্ন: আবু লাহাব কে ?

উত্তর: আবু লাহাব ছিল রাসূল (সা)-এর চাচা এবং মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় নেতা।

১১৭। প্রশ্ন: আবু লাহাবের স্ত্রী কে ছিল ?

উত্তর: তার স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আওরায়া বিনতে হারব। তার উপনাম ছিল উম্মে জামীল।

১১৮। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর সাথে তার ব্যবহার কিরুপ ছিলো ?

উত্তর: রাসূল (সা)-এর চাচা হওয়া সত্ত্বেও সে ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু। মুসলিমদের উপর নির্যাতন তীব্রতর করার প্রস্তাব সেই রেখেছিলো।

১১৯। প্রশ্ন: তার স্ত্রী উম্মে জামীল (রা) রাসূল (সা)-এর সাথে কেমন আচরণ করতো ?

উত্তর: স্বামীর মতো সেও রাসূল (সা) এর সাথে ঘৃণা ও শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করতো। রাসূল (সা)-কে কষ্ট দেয়ার জন্য সে রাসূল (সা)-এর বাড়ির সামনে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা ও কাটা বিছিয়ে রাখতো।

১২০। প্রশ্ন: রাসূল (সা) সম্পর্কে মানুষের কাছে আবু লাহাব কী বলত ?

উত্তর: ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন আবু লাহাব প্রকাশ্যে বলত, “ হে মানুষেরা! তোমরা তার কথা শুনবে না কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী ও ধর্মত্যাগী”।

১২১। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে আবু লাহাব কী করল।

উত্তর: রাসূল (সা)কে অপমান করার জন্য সে কৌশল বের করল। সে রাসূল (সা)-কে পাথর ছুড়ে মারল, তার দুই ছেলে উতবা ও উতাইবাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে তালাক প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি রাসূল (সা)-এর দ্বিতীয় ছেলে ইন্তিকালে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল এবং রাসূল (সা)-কে নির্ব্বংশ বলে বেড়াতে লাগলো।

১২২। প্রশ্ন: তার ছেলে উতাইবা রাসূল (সা)-এর সাথে কীরূপ ব্যবহা করেছিল ?

উত্তর: একদিন উতাইবা রাসূল (সা)-এর কাছে এগিয়ে আসলো এবং কর্কশভাবে চিত্কার করে বলতে লাগলো, “আমি আপনার শিক্ষায় বিশ্বাসী নই। এরপর সে রাসূল (সা)-এর উপর হিংস্র হাত উঠাল এবং তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো। কিন্তু রাসূল (সা)-এর পবিত্র মুখে থুথু পড়েনি। তার এমন আচরণে রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! তোমার কুকুরদের মধ্য থেকে একটি কুকুর তার উপর নাযিল কর”।

১২৩। প্রশ্ন: উতাইবার কী পরিণতি হয়েছিলো?

উত্তর: একবার উতাইবা তার দেশের কিছু লোকের সাথে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং ‘যারাকা’ নামাক স্থানে যাত্রা বিরতি করল। হঠাত একটি সিংগ তাদের কাছে এসে তাদের মাঝখান থেকে উতাইবাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল এবং তার মাথা ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়েছিল।

১২৪। প্রশ্ন: উকবা বিন আবি মুয়িত কে?

উত্তর : সেও মক্কার একজন নেতা যে রাসূল (সা) ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতো।

১২৫। প্রশ্ন: সে রাসূল (সা)-এর সাথে কী আচরণ করতো ?

উত্তর: সে উটনীর নাড়ি-ভূড়ির ময়লা-আবর্জনা এনে রাসূল (সা)-এর উপর রাখত। এ নিকৃষ্ট কাজে কাফিরদের মধ্যে হাসির বন্যা বয়ে যেত।

১২৬। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর পিঠ থেকে নোংরা আবর্জনাগুলো কে পরিস্কার করতো ?

উত্তর : ফাতিমা (রা) এসে তার বাবার পিঠ থেকে এ নোংরা আবর্জনাগুলো পরিস্কার করতো।

১২৭। প্রশ্ন:,এ রাসূল (সা)-এরপর কী করতেন ?

উত্তর: তিনি উকবার উপর আল্লাহর গযবের বা আযাবের প্রার্থনা করতেন।

১২৮। প্রশ্ন: সালাত পড়ার সময় রাসূল (সা)-এর সাতে কী করতো ?

উত্তর: একবার রাসূল (সা) সালাত পড়ছিলেন এমন সময় উকবা এসে তার গলায় পা রাখল এবং তার চোখগুলো সামনের দিকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ধরে রাখল।

১২৯। প্রশ্ন: পরবর্তীতে রাসূল (সা) যখন সালাতের সেজদায় যেতেন তখন উকবা তার মাথায় কী নিক্ষেপ করতো ?

উত্তর: সে ভেড়ার নাড়ি-ভূড়ি এনে রাসূল (সা)-এর মাথায় নিক্ষেপ করত।

১৩০।প্রশ্ন: কে রাসূল (সা)-এর মাথা থেকে এগুলো পরিষ্কার করতেন ?

উত্তর: রাসূল (সা)-এর মেয়ে ফাতিমা (রা)।

১৩১। প্রশ্ন: উকবার কি রাসূল (সা)-কে মারার চেষ্টা করেছিলো ?

উত্তর : হ্যাঁ, সে রাসূল (সা)-এর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেছিলো।

১৩২। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে বাঁচানোর জন্য কে এগিয়ে এসেছিলো ?

উত্তর: আবু বকর (রা) রাসূলকে বাঁচাতে এলেন। তিনি উকবাকে শক্তভাবে ধরে ধাক্বা মেরে রাসূল (সা) থেকে তাকে আলাদা করে দিলেন।

১৩৩। প্রশ্ন : আবু বকর (রা) তাকে কি বললেন ?

উত্তর: তিনি বললেন, “তুমি কি এ কারণে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে, যে বলে তার শাসনকর্তা আল্লাহ”।

১৩৪।  প্রশ্ন: উকবার কি পরিণতি হয়েছিলো ?

উত্তর: বদর যুদ্ধে তাকে বন্দী করা হয়। পরে রাসূল (সা)-এর নির্দেশে সাফরা নামক স্থানে আলী বিন আবি তালিব তাকে হত্যা করে।


                   ♦(পর্ব-১০)♦


   ♣রাসূল (সা)-এর সাহায্যকারী♣

১৩৪। প্রশ্ন: রাসূল (সা) কে মক্কার কোন কাফিররা সাহায্য করেছিলো ?

উত্তর: মক্কার কাফিরদের মধ্যে কয়েকজন কাফির রাসূল (সা)-কে সাহায্য করেছিলো।

১৩৫। প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি কিন্তু রাসূল (সা)-কে সাহায্য করেছে তাদের নাম কী ?

উত্তর: তারা হলেন- আবু তালিবা, মুত’ইম বিন আদি এবং আবুল বু’খতারি।

১৩৬। প্রশ্ন: আবু তালিব কে ?

উত্তর: আবু তালিব ছিলেন রাসূল (সা)-এর চাচা।

১৩৭। প্রশ্ন: শত্রুদের হাত থেকে তিনি কতদিন রাসূল (সা)-কে রক্ষা করেছিলেন ?

উত্তর: ইসলামের শুরু থেকে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর তিনি রাসূল (সা)-কে রক্ষা করেছিলেন।

১৩৮। প্রশ্ন: মুত’ইম বিন আদি কে ?

উত্তর: তিনি ছিলেন মক্কার একজন নেতা।

১৩৯। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে তিনি কখন আশ্রয় দিয়েছিলেন ?

উত্তর: রাসূল (সা) যখন তায়েফ থেকে ফিরে আসলেন এবং মক্কায় প্রবেশ করতে চাইলেন, তখন মুতততত’ইম বিন আদি তাকে আশ্রয় দেন।

১৪০। প্রশ্ন: তিনি কখন ইনতিকাল করেন ?

উত্তর : তিনি বদর যুদ্ধে নিহত হন।

১৪১। প্রশ্ন: আবুল বুখতারি কে ?

উত্তর: তিনি ছিলেন একজন কবি।

১৪২। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে তিনি কখন সাহায্য করেছিলেন ?

উত্তর: তিনি সামাজিক বয়কটের বিরুদ্ধে কখা বলেন এবং বয়কট প্রত্যাহারের জন্য জনমত তৈরি করেন।

১৪৩। প্রশ্ন: তিনি কখন নিহত হন ?

উত্তর: তিনি বদর যুদ্ধে নিহত হন।

 চলবে................

সংগ্রহীত :  Way To Jannah

কোন মন্তব্য নেই:

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ ফেইসবুকে শেয়ার করুন   টুইটারে টুইট   প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন...