যদি হঠাৎ করে কাউকে বলতে শোনেন যে—
“আমাদের মসজিদগুলো আজ শয়তানের চারণভূমি!”
-তাহলে হয়তো চমকে উঠবেন !!!
.
কিন্তু যদি একটা হাদিসের বক্তব্য লক্ষ্য করেন, তাহলে আর চমকাবেন না বরং কথাটা খুব স্বাভাবিক বলে মনে হবে!
কোন সে হাদিস? চলুন হাদিসটা দেখি।
.
.
“রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন: তোমরা কাতারের মধ্যে পরস্পর মিলে মিশে দাঁড়াও, এক কাতার অপর কাতারের নিকটে কর এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও।
যাঁর হাতে আমার জীবন,তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে নামাযের কাতারের মধ্যে বকরীর ন্যায় প্রবেশ করতে দেখেছি।“ [নাসাঈ, আবু দাউদ, ১ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৬৬৭; সনদ সহীহ ]
.
.
অন্যত্র একটি হাদিসে আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রাযি.) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।” [ সহিহ বুখারী ৭২৫] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৯)
.
__________
.
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর এই হাদিসের বক্তব্য মাথায় রেখে আমাদের দেশের মসজিদগুলোর একটা দৃশ্য কল্পনা করি। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে কয়জন মানুষ এভাবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর নির্দেশ অনুযায়ী নামাযে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে দাঁড়ায়? আমার নিজের দেখা মসজিদগুলোতে ৯০% অথবা তারও উপরে মানুষ কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে দাঁড়ায় না বরং ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনকার ৫ ওয়াক্ত সলাতে মসজিদগুলোর একই দৃশ্য। রাসুল(ﷺ) এর সুন্নাহর জ্ঞান কারো মাঝে নেই, প্রাধান্য পায় ‘আরাম’। বিশেষ করে রমযান মাসের রাতে কিয়ামুল লাইল (তারাবিহ) নামাযের সময় এই আরামপ্রিয় মুসলিম জনতা ‘আরাম করে’ নামায পড়ার জন্য আরো বেশি ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। এই আরামের ফলে কী হয়? বকরীর ন্যায় শয়তান প্রবেশ করে বলে রাসুল(ﷺ) পরস্পরকে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে নামাযে দাঁড়াবার আদেশ দিয়েছেন। একটা মসজিদের ৯০% মানুষ যদি কাঁধে কাঁধ না লাগিয়ে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে নামাযে দাঁড়ায়, তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়ায়? সব কাতারে বকরীর ন্যায় শয়তান প্রবেশ করতে থাকে, ফলে গোটা মসজিদটায় শয়তানের একটা চারণভূমিতে পরিণত হয়।
.
শয়তান তো এমন জিনিস যে আমাদের দেখতে পায় কিন্তু আমরা শয়তানকে দেখার ক্ষমতা রাখি না (সুরা আ’রাফ ৭:২৭ দ্রষ্টব্য)। ওহীপ্রাপ্ত আল্লাহর রাসুল(ﷺ) আমাদেরকে শয়তানের ব্যাপারে জানিয়ে গেছেন। কাজেই আসুন আমরা রাসুল(ﷺ) এর আদেশ অনুযায়ী কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে নামাযে দাঁড়াই, ফাঁকা ফাঁকা না হই এবং মসজিদগুলোকে শয়তানের চারণভূমি হওয়া থেকে রক্ষা করি। একই সাথে নামাযের কাতারটাও সোজা করি কেননা সেটাও রাসুল(ﷺ) এর নির্দেশ [সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৬৮৯ দ্রষ্টব্য]। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে ফাঁকা না রেখে দাঁড়ালে কাতার সোজা করা সহজ হয়।
.
__________
.
জামাতে নামাযের ক্ষেত্রে আরেকটা দৃশ্য কমন। জামাত শুরু হয়ে গেলে দেখা যায় রাকাত ধরবার জন্য অনেকে ঠিক যেন উসাইন বোল্টের গতিতে দৌঁড় দেন! এটা আরেকটা সুন্নাহবিরোধী কাজ। এমনটি করা ঠিক নয়। মসজিদে নামাযে সামনের কাতারে দাঁড়ানোর অনেক ফযিলত রয়েছে।
.
ইরবায ইবন সারিয়া(রা) রাসুলুল্লাহ(ﷺ) থেকে বর্ণণা করেন যে,তিনি প্রথম কাতারের জন্য তিনবার(রহমত ও মাগফিরাতের) দোয়া করতেন,তারপর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার।
[সুনান নাসাঈ, ১ম খণ্ড(ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৮১৮, সনদ সহীহ ]
.
কাজেই দেরি না করে সামনের কাতারের জন্য একটু আগেই মসজিদে আসা উচিত। এর ফলে আর দৌঁড়াবার মত পরিস্থিতি তৈরি হবে না। আর যদি কোন কারণে দেরি হয়েও যায়, তাহলে না দৌঁড়ে স্বাভাবিকভাবে এসে জামাত ধরতে হবে এবং যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকু জামাতে শরীক হতে হবে।
.
কেননা হাদিসে আছেঃ আবু হুরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কে বলতে শুনেছি, “নামায শুরু হয়ে গেলে তোমরা তাতে শরীক হওয়ার জন্য দৌঁড়াবে না বা তাড়াহুড়া করবে না। বরং ধীরস্থিরভাবে হেঁটে হেঁটে যাও। তোমাদেরকে গাম্ভীর্য বজায় রাখতে হবে। এভাবে ইমামের সাথে নামাযের যে অংশ পাবে তাই পড়বে। আর যা পাবে না তা পূর্ণ করে নেবে।” [সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার), হাদিস নং ১২৪৭]
.
__________
.
কাউকে কাউকে দেখা যায় মসজিদে নামায আদায়ের মধ্যে উদাসভাবে এদিক-ওদিক তাঁকাতে। এমনটি করা ঠিক নয়। নামাযের মধ্যে কোথায় দৃষ্টি রাখা উচিত?
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র) বর্ণণা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন মাথা নিচু করে (সিজদার দিকে) রাখতেন। আর তাশাহহুদ পাঠের সময় তাঁর দৃষ্টি শাহাদাত আঙুলের সীমা পার হত না। [মুখতাসার যাদুল মা’আদ, মূলঃ ইবনিল কাইয়িম জাওযী(র); সংক্ষেপণঃ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব(র), পৃষ্ঠা ৫০]
.
.
নামাযের মধ্যে উপরের দিকে তাঁকানোর ব্যাপারে হাদিসে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
.
নবী (ﷺ) বলেছেনঃ “লোকদের কি হল যে, তারা নামাযে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকে, অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: সলাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ | অনুচ্ছেদ: সলাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো, হাদিস নং ৭৫০]
.
.
জিলহজ্জ মাস সংযমের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস। আমরা এই জিলহজ্জ মাসের মধ্যেই নবী (ﷺ) এর সুন্নাতের আলোকে নিজ নিজ নামাযের ত্রুটিগুলো সংশোধণ করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাকে এবং সবাইকে তৌফিক দান করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন