
১. ইমাম মাহদীর আগমণ
সহীহ হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে। ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে।[1]
ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ
তাঁর নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নামের মতই এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পিতার নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ)এর বংশ থেকে। ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’।[2]
তাঁর আগমণের স্থানঃ
তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদ্বীনা মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘‘এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’।[3]
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে’’।[4]
মাহদী আগমণের দলীলসমূহঃ
ইমাম মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।
১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’’।[5]
২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আসমান-যমীনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন’’।[6]
৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
‘‘মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে যুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’’।[7]
৪) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের ফাতেমার বংশধর হতে’’।[8]
৫) জাবের (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’।[9]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম আল-মানারুল মুনীফ গ্রন্থে উক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। যেই আমীরের ইমামতিতে মুসলমানগণ নামায পড়বেন, তিন তাঁর নামও উল্লেখ করেছেন। আর তিনি হলেন মাহদী। এই হাদীছ সম্পর্কে ইবনুল কায়্যেম বলেনঃ হাদীছের সনদ খুব ভাল।[10]
৬) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ ‘‘ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের মধ্যে হতে’’।[11]
৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ’’।[12] অর্থাৎ তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।
৮) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে’’।[13]
৯) হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ত্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে’’।[14]
১০) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কা’বার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন।[15]
তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের লোকেরাও উক্ত ভূমিধস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে।
উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কা’বার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদী সম্পর্কিত কিছু হাদীছঃ
১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
‘‘সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’’।[16] অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা'তে শরীক হয়ে ঈসা (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।
২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’।[17]
৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন’’।[18]
মাহদী আগমণের ব্যাপারে কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যঃ
ক) হাফেয আবুল হাসান আল-আবেরী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদী সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আহলে বায়ত তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধরের অন্তর্ভূক্ত হবেন। সাত বছর রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্বকালে পৃথিবী ন্যায়-ইনসাফে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাঁর রাজত্বকালে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আগমণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) তাঁর পিছনে নামায পড়বেন’’।[19]
খ) ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ ‘‘যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সহীহ, হাসান ও সামান্য ত্রুটি বিশিষ্ট হাদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ত্রুটিমুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং বিনা সন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির’’।[20]
গ) শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রঃ) বলেনঃ মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এ ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির[21] সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমণ সত্য। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী আল-ফাতেমী। আখেরী যামানায় তিনি আগমণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায়-অবিচার প্রতিহত করবেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যাণের ঝান্ডা বলুন্দ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আগমণকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা যাবেনা।[22]
ঘ) শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ বলেনঃ ‘‘২৬জন সাহাবী থেকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কিত হাদীছগুলো বর্ণিত হয়েছে। ৩৬টি হাদীছ গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে’’।[23]
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইমাম মাহদীর আগমণে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। কারণ তাঁর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদীর নের্তৃত্বে মুসলমানগণ স্বসম্মান ও সুখণ্ডশান্তিতে বসবাস করতে থাকবেন। ইমাম মাহদী মুসলমানদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করার জন্য প্রস্ত্ততি নিতে থাকবেন। এমন সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে আগমণ করবেন। ইমাম মাহদী ঈসা (আঃ)কে দেখে বলবেনঃ সামনে অগ্রসর হোন এবং আমাদের ইমামতি করুন। হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী আরো জানা যায় যে, ইমাম মাহদীর সময় মুসলমানদের ঈমান ও শক্তি ধ্বংস করার জন্য দাজ্জালের আগমণ ঘটবে। দাজ্জালের মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)কে পাঠাবেন। ইমাম মাহদীও তাঁর সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে এবং তার বাহিনীকে খতম করে মুসলমানদেরকে দাজ্জালের ফিতনা হতে মুক্ত করবেন।
ঙ) সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদীর ব্যাপারে অনেক হাদীছ বিভিন্ন গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে’’।[24]
চ) সুনানে আবু দাউদ শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা শামছুল হক আযীমাবাদী (রঃ) বলেনঃ ‘‘সর্ব যুগের সকল মুসলমানদের মাঝে একথা অতি প্রসিদ্ধ যে, আখেরী যামানায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধর হতে একজন সৎলোকের আগমণ ঘটবে। তিনি এই দ্বীনকে শক্তিশালী করবেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলমানগণ তাঁর অনুসরণ করবে। সমস্ত ইসলামী রাজ্যের উপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হবে। তাঁর নাম হবে মাহদী। তাঁর আগমণের পরেই সহীহ হাদীছে বর্ণিত কিয়ামতের অন্যান্য বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তাঁর যামানাতেই ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ ব্যাপারে মাহদীও তাঁকে সহযোগিতা করবেন।
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে ইমাম মাহদী সম্পর্কে আমরা যা অবগত হলাম তার সংক্ষিপ্ত কথা হল আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একজন সৎ লোক আগমণ করবেন। মাকামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমানগণ তাঁর হাতে বায়আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধসে সকল সৈন্য হালাক হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইমাম মাহদীকে এভাবে তাঁর শত্রুদের হাত থেকে হেফাযত করবেন। তিনি মুসলমানদের খলীফা হয়ে ইসলামের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও নেয়া'মত বিরাজ করবে। অতঃপর তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ)কে নামাযের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আঃ)এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ)কে সহায়তা করবেন। তারপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তাঁর জানাযা নামায পড়বে।
২. দাজ্জালের আগমণ
আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। ইবনে উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ
قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন। নাওয়াস বিন সামআন (রাঃ) বলেনঃ
ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ فَانْصَرَفْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَيْهِ فَعَرَفَ ذَلِكَ فِينَا فَقَالَ مَا شَأْنُكُمْ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ الْغَدَاةَ فَخَفَّضْتَ فِيهِ وَرَفَّعْتَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُ لِي عَلَيْكُمْ إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট’’।[1]
দাজ্জালের আগমণের সময় মুসলমানদের অবস্থাঃ
দাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।
দাজ্জালের পরিচয়ঃ
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মু’মিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোঁকায় পড়বেনা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু।[2] দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা’’।[3]
দাজ্জালের কোন্ চোখ কানা থাকবে?
বিভিন্ন হাদীছে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীছে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদীছে আছে তার ডান চোখ অন্ধ হবে। আবার কোন হাদীছে আছে তার বাম চোখ হবে অন্ধ। মোটকথা তার একটি চোখ দোষিত হবে। তবে ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীছগুলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।[4] মোটকথা দাজ্জালের অন্যান্য লক্ষণগুলো কারো কাছে অস্পষ্ট থেকে গেলেও অন্ধ হওয়ার বিষয়টি কারো কাছে অস্পষ্ট হবেনা।
দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃ
তাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের كافر)) লেখা থাকবে।[5] অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে(ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[6] অপর বর্ণনায় আছে শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[7] মোটকথা আল্লাহ মু’মিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফের ও মুনাফেক লোক তা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।[8]
দাজ্জালের ফিতনাসমূহ ও তার অসারতাঃ
আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই সতর্ক করেছেন। মু’মিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।
দাজ্জাল নিজেকে রাবব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায় এবং পেশাব-পায়খান করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রবব ও আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।
দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?
ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেনঃ প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিত করেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা। তারা বললঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। তারা বললোঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী? অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তামীম দারী বলেনঃ প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললোঃ তখন আমাদের ভয় হলো যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা বললামঃ মরণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও। আমরা বললামঃ আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিলনা। আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। আমরা বললামঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী? অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমণ করলাম। হতে পারো তুমি একজন শয়তান- এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই। সে বললোঃ আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ বাইসানের কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললোঃ আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়? আমরা বললামঃ হ্যঁা। সে বললোঃ সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা। অতঃপর সে বললোঃ আমাকে বুহাইরাতুত্ তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ বুহাইরাতুত্ তাবারীয়ার কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি আছে। সে বললোঃ অচিরেই তথাকার পানি শেষ হয়ে যাবে। সে পুনরায় বললোঃ আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ সেখানকার কি সম্পর্কে তুমি জানতে চাও? সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে। সে আবার বললোঃ আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কে জানাও। আমরা বললামঃ সে মক্কায় আগমণ করে বর্তমানে মদ্বীনায় হিজরত করেছে। সে বললোঃ আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে? বললামঃ হ্যাঁ। সে বললোঃ ফলাফল কি হয়েছে? আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। সে বললঃ তাই না কি? আমরা বললাম তাই। সে বললোঃ তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদ্বীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদ্বীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদ্বীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।
হাদীছের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেনঃ এটাই মদ্বীনা, এটাই মদ্বীনা, এটাই মদ্বীনা। অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবেনা। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তামীম দারীর হাদীছটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদ্বীনা সম্পর্কে। শুনে রাখো! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ ‘‘আমি এই হাদীছটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি’’।[9]
দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বেঃ
ক) একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণঃ নাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ ‘‘দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে’’।[10] তিনি আরো সংবাদ দিয়েছেন যে মক্কা ও মদ্বীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে। মক্কা ও মদ্বীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দিবে।
খ) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নামঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাত এবং জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ণ বিপরীত। দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا مَعَ الدَّجَّالِ مِنْهُ مَعَهُ نَهْرَانِ يَجْرِيَانِ أَحَدُهُمَا رَأْيَ الْعَيْنِ مَاءٌ أَبْيَضُ وَالْآخَرُ رَأْيَ الْعَيْنِ نَارٌ تَأَجَّجُ فَإِمَّا أَدْرَكَنَّ أَحَدٌ فَلْيَأْتِ النَّهْرَ الَّذِي يَرَاهُ نَارًا وَلْيُغَمِّضْ ثُمَّ لْيُطَأْطِئْ رَأْسَهُ فَيَشْرَبَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مَاءٌ بَارِدٌ وَإِنَّ الدَّجَّالَ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ عَلَيْهَا ظَفَرَةٌ غَلِيظَةٌ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ كَاتِبٍ وَغَيْرِ كَاتِبٍ
‘‘দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দু’টি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে’’।[11]
গ) দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবেঃ দাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানের সহযোগীতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা ও গোমরাহী এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক’’।[12] হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
ঘ) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবেঃ দাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমীনকে ফসল উৎপন্ন করতে বলবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে’’।[13]
ঙ) দাজ্জাল একজন মু’মিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দাজ্জাাল বের হয়ে মদ্বীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদ্বীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদ্বীনার নিকটবর্তর্ী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মু’মিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবেঃ না। অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা।[14] মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ উক্ত যুবক বলবেনঃ তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনও ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘‘এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী’’।[15]
দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে?
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদ্বীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদ্বীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসান’’।[16]
দাজ্জাল মক্কা ও মদ্বীনায় প্রবেশ করতে পারবেনাঃ
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী দাজ্জালের জন্যে মক্কা ও মদ্বীনাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। মক্কা ও মদ্বীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই সে প্রবেশ করবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দাজ্জালের হাদীছে এসেছে অতঃপর দাজ্জাল বললোঃ আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদ্বীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদ্বীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে ফেরেশতাগণ আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদ্বীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে’’।[17] সে সময় মদ্বীনা শরীফ তিনবার কেঁপে উঠবে এবং প্রত্যেক মুনাফেক এবং কাফেরকে বের করে দিবে। যারা দাজ্জালের নিকট যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে তাদের অধিকাংশই হবে মহিলা। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরুষেরা তাদের স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা, ফুফু এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।
দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ না; বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামায পড়বে।[18]
কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?
দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব লোক। তাদের অধিকাংশই হবে গ্রাম্য মূর্খ এবং মহিলা। ইহুদীরা মিথ্যুক কানা দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তার নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা।[19] তিনি আরো বলেনঃ ‘‘ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর’’।[20]
গ্রাম্য অশিক্ষিত লোকেরা মূর্খতার কারণে এবং দাজ্জালের পরিচয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকার কারণে দাজ্জালের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তারা ফিতনায় পড়বে। মহিলাদের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তারা সহজেই যে কোন জিনিষ দেখে প্রভাবিত হয়ে থাকে।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপর রেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল অকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন। উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে কোনরূপ অসুবিধা না হয়।
ইমাম সাফারায়েনী (রঃ) বলেনঃ প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদীছগুলো বর্ণনা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান যামানায়। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরূপঃ-
১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাঃ ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয় সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে সে অতি সহজেই দাজ্জালকে চিনতে পারবে। সে দেখতে পাবে দাজ্জাল খায় পান করে। মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহ তাআলা পানাহার ও অন্যান্য মানবীয় দোষ-গুণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। যে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী সে কখনও আল্লাহ বা রবব হতে পারেনা। দাজ্জাল হবে অন্ধ। আল্লাহ এরূপ দোষ-ত্রুটির অনেক উর্ধে। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অধিকারী মুমিনগণের মনে প্রশ্ন জাগবে যে নিজের দোষ থেকে মুক্ত হতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু হতে পারে? মুমিনের আকীদা এই যে, আল্লাহকে দুনীয়ার জীবনে দেখা সম্ভব নয়। অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন-কাফের সবাই দুনিয়াতে দেখতে পাবে।
২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি’’।[21] তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই’’।[22]
৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে। মু’মিনের জন্য উত্তম হলো সম্ভব হলে সে সময়ে মদ্বীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়। আল্লাহর শপথ! এমন একজন লোক দাজ্জালের নিকটে যাবে যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। অতঃপর সে দাজ্জালের সাথে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও তার কাজ-কর্ম দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
৪) সূরা কাহাফ পাঠ করাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে’’।[23]
সূরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ সম্ভবতঃ এজন্য হতে পারে যে, এই সূরায় আল্লাহ তাআলা বিস্ময়কর বড় বড় কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মুমিন ব্যক্তি এগুলো গভীরভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবেনা। এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বেনা।
দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃ
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। বিস্তারিত বিবরণ এই যে, মক্কা-মদ্বীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মু’মিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ ‘‘তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা।’’ ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।[24]
সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ إِلَّا الْغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ)
‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বা পাথর বলবেঃ হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত’’।[25]
৩. ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর আগমণ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস এই যে, ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তা’আলা জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। ইহুদীরা তাকে হত্যা করতে পারেনি। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের নবীর উম্মাত হয়ে আবার দুনিয়াতে আগমণ করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করবেন, খৃষ্টান ধর্মের পতন ঘটাবেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন, আমাদের নবীর শরীয়ত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবেন এবং ইসলামের বিলুপ্ত হওয়া আদর্শগুলো পুনর্জীবিত করবেন। পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার পর তিনি মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা নামায পড়ে তাকে দাফন করবেন। তাঁর আগমণের পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীছে অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে কতিপয় দলীল বর্ণনা করা হলোঃ
কুরআন থেকে দলীলঃ
১) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا (157) بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا (158) وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا(
‘‘এবং তারা বলে আমরা মারইয়ামের পুত্র আল্লাহর রাসূল ঈসাকে হত্যা করেছি। মূলতঃ তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করতে পারেনি; বরং তাদেরকে সন্দেহে ফেলা হয়েছে। নিশ্চয়ই যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল তারাই সে বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে। কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি। আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী। আহলে কিতাবদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং উত্থান দিবসে তিনি তাদের উপর সাক্ষ্য প্রদান করবেন। (সূরা নিসাঃ ১৫৭-১৫৯) এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় মুফাসি্সরগণ বলেনঃ আখেরী যামানায় যখন ঈসা (আঃ) দুনিয়ায় অবতরণ করবেন তখন সকল আহলে কিতাব তাঁর প্রতি বিশ্বাস করবে। ইহুদীদের দাবী তখন মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।
২) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
)وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ(
‘‘নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) কিয়ামতের নিদর্শন। সুতরাং তোমরা কিয়ামতের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করোনা। আমার অনুসরণ করো। এটাই সরল পথ’’। (সূরা যুখরুফঃ ৬১) অত্র আয়াতে কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ)এর আগমণের কথা বলা হয়েছে। এটি হবে কিয়ামতের একটি বড় আলামত। তাঁর আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার প্রমাণ বহন করবে’’।[1]
হাদীছ থেকে দলীলঃ
ঈসা (আঃ)এর আগমণের ব্যাপারে অস্যংখ্য সহীহ হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করবোঃ
১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ( وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا )
‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসেবে ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে আগমণ করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযইয়া প্রত্যাখ্যান করবেন। ধন-সম্পদ প্রচুর হবে এবং তা নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। এমনকি মানুষের কাছে একটি সেজদা দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত বস্ত্ত হতে শ্রেষ্ঠ হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ তোমরা চাইলে আল্লাহর এই বাণীটি পাঠ কর,
)وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا (
‘‘আহলে কিতাবদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং উত্থান দিবসে তিনি তাদের উপর সাক্ষ্য প্রদান করবেন’’।[2] এখানে আবু হুরায়রা (রাঃ) বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আহলে কিতাবের লোকেরা অচিরেই ঈসা (আঃ)এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর উপর ঈমান আনবে। আর সেটি হবে আখেরী যামানায় তাঁর অবতরণের পর।
২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ)
‘‘আমার উম্মতের একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করে বিজয়ী থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। সেদিন মুসলমানদের আমীর তাঁকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ আসুন! আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেনঃ না; বরং তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর। এ কারণে যে, আল্লাহ এই উম্মতকে সম্মানিত করেছেন’’।[3]
৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
بَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأْسَهُ قَطَرَ وَإِذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤِ فَلَا يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلَّا مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يَأْتِي عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ قَوْمٌ قَدْ عَصَمَهُمُ اللَّهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ
‘‘সে (দাজ্জাল) যখন মুসলমানদের ঈমান ধ্বংসের কাজে লিপ্ত থাকবে আল্লাহ তাআলা তখন ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)কে পাঠাবেন। জাফরানের রঙ্গিন দু’টি পোষক পরিহিত হয়ে এবং দু’জন ফেরেশতার পাখার উপর হাত রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের উপরে তিনি অবতরণ করবেন। তিনি যখন মাথা নিচু করবেন তখন সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন তখন অনুরূপভাবে তাঁর মাথা হতে মণি-মুক্তার মত চকচকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে। কাফেরের শরীরে তাঁর নিঃশ্বাস পড়ার সাথে সাথেই কাফের মৃত্যু বরণ করবে। চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত গিয়ে তাঁর নিঃশ্বাস শেষ হবে। তিনি দাজ্জালকে ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে পাকড়াও করে হত্যা করবেন। অতঃপর তাঁর নিকট এমন কিছু লোক আসবেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।[4]
৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فَبَيْنَمَا إِمَامُهُمْ قَدْ تَقَدَّمَ يُصَلِّي بِهِمُ الصُّبْحَ إِذْ نَزَلَ عَلَيْهِمْ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ الصُّبْحَ فَرَجَعَ ذَلِكَ الْإِمَامُ يَنْكُصُ يَمْشِي الْقَهْقَرَى لِيَتَقَدَّمَ عِيسَى يُصَلِّي بِالنَّاسِ فَيَضَعُ عِيسَى يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ تَقَدَّمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ أُقِيمَتْ فَيُصَلِّي بِهِمْ إِمَامُهُمْ
‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আগমণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ইমামতি করবেন’’।[5] এখানে যে ইমামের কথা বলা হয়েছে আলেমদের বিশুদ্ধ মতে তিনি হলেন ইমাম মাহদী।
ঈসা (আঃ)এর আগমণ সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে। এ সমস্ত সহীহ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) শেষ নবীর উম্মত হয়ে দুনিয়াতে আগমণ করবেন। এতে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ঈসা (আঃ) কোথায় এবং কখন অবতরণ করবেন?
ঈসা (আঃ)এর আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি বড় আলামত। পূর্বে আলোচনা করেছি যে, দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুসলমানদেরকে মুক্ত করার জন্য তিনি আগমণ করবেন। এটিই হবে তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ। সে হিসেবে আখেরী যামানায় দাজ্জাল আগমণ করে যখন মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার কাজে আত্মনিয়োগ করবে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে তখন ঈসা (আঃ) আগমণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। জাফরানী রঙ্গের দু’টি পোষাক পরিহিত অবস্থায় দুইজন ফেরেশতার পাখার উপর হাত রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের উপরে তিনি অবতরণ করবেন।[6]
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানগণ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ফজরের নামাযের ইকামত হয়ে যাবে। তখন মুসলমানদের ইমাম নামাযের ইমামতির জন্য সামনে চলে যাবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে মুসলমানদের ইমাম পিছনে চলে আসতে চাইবেন এবং ঈসা (আঃ)কে ইমামতি করতে বলবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে মুক্তাদী হয়ে নামায পড়বেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السلام فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لَانْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ)
‘‘মুসলমানগণ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকবে এবং কাতারবন্দী হতে থাকবে। ইতিমধ্যেই যখন নামাযের ইকামত হয়ে যাবে তখন ঈসা (আঃ) অবতরন করবেন। আল্লাহর শত্রু দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবণ গলার ন্যায় গলতে থাকবে। ঈসা (আঃ) যদি তাকে ছেড়েও দেন তথাপিও সে মৃত্যু পর্যন্ত গলতে থাকবে। কিন্তু তিনি তাকে নিজ হাতে হত্যা করবেন এবং মুসলমানদেরকে তাঁর লৌহাস্ত্রে দাজ্জাল হত্যার আলামত হিসেবে রক্ত দেখাবেন’’।[7]
ঈসা (আঃ) এসে যে সমস্ত দায়িত্ব পালন করবেনঃ
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) নবী হয়ে নতুন কোন শরীয়ত নিয়ে দুনিয়াতে আসবেন না; বরং তিনি আমাদের নবীর একজন উম্মত হয়ে আগমণ করবেন এবং আমাদের শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। তিনি নিম্নের বড় বড় কয়েকটি কাজে আঞ্জাম দিবেন।
১) দাজ্জালকে হত্যা করবেনঃ পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে মুসলমানগণ যখন দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্ততি গ্রহণ করতে থাকবে ঠিক তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। তখন ফজরের নামাযের ইকামত হয়ে যাবে। তিনি তখনকার ইমামের পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায় করবেন। দাজ্জাল ঈসা (আঃ)এর আগমণ সম্পর্কে জানতে পেরে বাইতুল মাকদিসের দিকে চলে যাবে। সেখানে গিয়ে দেখবেন দাজ্জাল একদল মুসলমানকে অবরোধ করে রেখেছে। ঈসা (আঃ) সেখানে গিয়ে দরজা খুলতে বলবেন। দরজা খুলে দেয়া হলে তিনি পিছনে দাজ্জালকে দেখতে পাবেন। তার পিছু ধাওয়া করে তাকে পাকড়াও করবেন এবং ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে তাকে এবং তার বাহিনী তথা ইহুদীদেরকে হত্যা করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فَبَيْنَمَا إِمَامُهُمْ قَدْ تَقَدَّمَ يُصَلِّي بِهِمُ الصُّبْحَ إِذْ نَزَلَ عَلَيْهِمْ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ الصُّبْحَ فَرَجَعَ ذَلِكَ الْإِمَامُ يَنْكُصُ يَمْشِي الْقَهْقَرَى لِيَتَقَدَّمَ عِيسَى يُصَلِّي بِالنَّاسِ فَيَضَعُ عِيسَى يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ تَقَدَّمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ أُقِيمَتْ فَيُصَلِّي بِهِمْ إِمَامُهُمْ فَإِذَا انْصَرَفَ قَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام افْتَحُوا الْبَابَ فَيُفْتَحُ وَوَرَاءَهُ الدَّجَّالُ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ يَهُودِيٍّ كُلُّهُمْ ذُو سَيْفٍ مُحَلًّى وَسَاجٍ فَإِذَا نَظَرَ إِلَيْهِ الدَّجَّالُ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ وَيَنْطَلِقُ هَارِبًا وَيَقُولُ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام إِنَّ لِي فِيكَ ضَرْبَةً لَنْ تَسْبِقَنِي بِهَا فَيُدْرِكُهُ عِنْدَ بَابِ اللُّدِّ الشَّرْقِيِّ فَيَقْتُلُهُ فَيَهْزِمُ اللَّهُ الْيَهُودَ فَلَا يَبْقَى شَيْءٌ مِمَّا خَلَقَ اللَّهُ يَتَوَارَى بِهِ يَهُودِيٌّ إِلَّا أَنْطَقَ اللَّهُ ذَلِكَ الشَّيْءَ لَا حَجَرَ وَلَا شَجَرَ وَلَا حَائِطَ وَلَا دَابَّةَ إِلَّا الْغَرْقَدَةَ فَإِنَّهَا مِنْ شَجَرِهِمْ لَا تَنْطِقُ
‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন তিনি পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ইমামতি করবেন।[8] নামায শেষে তিনি দরজা খুলতে বলবেন। তারা দরজা খুলে দিবে।[9] পিছনে তিনি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন। তার সাথে থাকবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সত্তুর হাজার ইহুদী। দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে থাকবে এবং পালাতে চেষ্টা করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনো রেহাই পাবেনা। ঈসা (আঃ) লুদ্দ শহরের পূর্ব গেইটে তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে পরাজিত করবেন। আল্লাহর কোন সৃষ্টির অন্তরালে ইহুদীরা পালাতে চাইলে আল্লাহ সেই সৃষ্টিকে কথা বলার শক্তি দিবেন। পাথর, গাছ, দেয়াল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর আড়ালে পলায়ন করলে সকলেই বলবেঃ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত।[10]
২) ইয়াজুয-মাজুযকে ধ্বংস করবেনঃ
ইয়াজুয-মাজুযের আগমণ কিয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। এ ব্যাপারে একটু পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এখানে যা বলা প্রয়োজন তা হলো দাজ্জালের ফিতনা খতম করার পর ইয়াজুয-মাজুযের দলেরা পৃথিবীতে নতুন করে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এই বাহিনীর মোকাবেলা করা মুসলমানদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঈসা (আঃ) আল্লাহর কাছে এই বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য প্রাণ খুলে দু’আ করবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দু’আ কবূল করবেন এবং ইয়াজুয-মাজুযের বাহিনীকে সমূলে খতম করে দিবেন।
৩) সমস্ত মতবাদ ধ্বংস করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবেনঃ
ঈসা (আঃ) আগমণ করে ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ করবেন। আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নবীর সুন্নাত দিয়ে বিচার-ফয়সালা করবেন। সেই সময়ে ইসলাম ছাড়া বাকী সমস্ত মতবাদ মিটিয়ে দিবেন। এ জন্যই তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতিক হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের কাছ থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন। ইসলাম অথবা হত্যা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করবেন না। মোটকথা এই শরীয়তকে নতুনভাবে সংস্কার করার জন্য এবং সর্বশেষ নবীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি পৃথিবীতে আগমণ করবেন।[11]
৪) ঈসা (আঃ)এর সময়কালে মানুষের সুখণ্ডশান্তি ও নিরাপত্তাঃ
সহীহ হাদীছ থেকে জানা যায় যে, ঈসা (আঃ)এর সময়কালে ব্যাপক সুখণ্ডশান্তি, নিরাপত্তা ও বরকত বিরাজ করবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে এ সমস্ত জিনিষ দ্বারা সম্মানিত করবেন। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ উঠে যাবে এবং সকল মানুষ কালেমায়ে তাইয়্যিবা তথা ইসলামের উপর একত্রিত হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فَيَكُونُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَام فِي أُمَّتِي حَكَمًا عَدْلًا وَإِمَامًا مُقْسِطًا يَدُقُّ الصَّلِيبَ وَيَذْبَحُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَيَتْرُكُ الصَّدَقَةَ فَلَا يُسْعَى عَلَى شَاةٍ وَلَا بَعِيرٍ وَتُرْفَعُ الشَّحْنَاءُ وَالتَّبَاغُضُ وَتُنْزَعُ حُمَةُ كُلِّ ذَاتِ حُمَةٍ حَتَّى يُدْخِلَ الْوَلِيدُ يَدَهُ فِي فِي الْحَيَّةِ فَلَا تَضُرَّهُ وَتُفِرَّ الْوَلِيدَةُ الْأَسَدَ فَلَا يَضُرُّهَا وَيَكُونَ الذِّئْبُ فِي الْغَنَمِ كَأَنَّهُ كَلْبُهَا وَتُمْلَأُ الْأَرْضُ مِنَ السِّلْمِ كَمَا يُمْلَأُ الْإِنَاءُ مِنَ الْمَاءِ وَتَكُونُ الْكَلِمَةُ وَاحِدَةً فَلَا يُعْبَدُ إِلَّا اللَّهُ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا وَتُسْلَبُ قُرَيْشٌ مُلْكَهَا وَتَكُونُ الْأَرْضُ كَفَاثُورِ الْفِضَّةِ تُنْبِتُ نَبَاتَهَا بِعَهْدِ آدَمَ حَتَّى يَجْتَمِعَ النَّفَرُ عَلَى الْقِطْفِ مِنَ الْعِنَبِ فَيُشْبِعَهُمْ وَيَجْتَمِعَ النَّفَرُ عَلَى الرُّمَّانَةِ فَتُشْبِعَهُمْ وَيَكُونَ الثَّوْرُ بِكَذَا وَكَذَا مِنَ الْمَالِ وَتَكُونَ الْفَرَسُ بِالدُّرَيْهِمَاتِ
‘‘আমার উম্মতের ভিতরে ন্যায় বিচারক শাসক এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হয়ে ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন। সাদকা গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা হবে। অর্থাৎ কোন অভাবী মানুষ থাকবেনা। সবাই আল্লাহর ফজলে ধনী হয়ে যাবে। কাজেই সাদকা নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। উট, ছাগল বা অন্য কোন চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি যত্ন নেয়া হবেনা। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ উঠে যাবে। বিষাক্ত সাপের বিষ চলে যাবে। শিশু বাচ্চারা বিষাক্ত সাপের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিবে। কিন্তু সাপ শিশুকে কামড় দিবেনা। এমনিভাবে শিশু ছেলে সিংহের পিঠে উঠে বসবে, কিন্তু সিংহ ছেলের কোন ক্ষতি করবেনা। ছাগল এবং নেকড়ে বাঘ এক সাথে মাঠে চরে বেড়াবে। অর্থাৎ বাঘ ছাগলের রাখালের মত হয়ে থাকবে। পানির মাধ্যমে গ্লাস যেমন পরিপূর্ণ হয়ে যায় পৃথিবীও তেমনিভাবে শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। সকলের কথা একই হবে। পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত করা হবেনা। যুদ্ধ-বিগ্রহ ন্ধ হয়ে যাবে। কুরাইশদের রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়া হবে। যমীন একেবারে খাঁটি রৌপ্যের মত পরিস্কার হয়ে যাবে। আদম (আঃ)এর যামানা থেকে শুরু করে তখন পর্যন্ত সকল প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হবে। অন্য বর্ণনায় আছে পাহাড়ের উপরে বীজ ছিটিয়ে দিলে সেখানেও ফসল উৎপন্ন হবে। একটি আঙ্গুরের থোকা এমন বড় হবে যে, একদল মানুষ তা খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে। একটি ডালিম একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বলদ গরুর দাম বেড়ে যাবে এবং কয়েক পয়সা দিয়ে ঘোড়া ক্রয় করা যাবে।[12] গরুর দাম বাড়ার এবং ঘোড়ার দাম কমার কারণ হল সমস্ত যমীন চাষা-বাদের উপযোগী হয়ে যাবে। কাজেই গরুর প্রয়োজন হবে বেশী। অপর পক্ষে যুদ্ধ-বিগ্রহ থাকবেনা বলে ঘোড়ার কোন মূল্যই থাকবেনা।
ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেনঃ
ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেন এ ব্যাপারে দুই ধরণের মত পাওয়া যায়। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিনি সাত বছর অবস্থান করবেন। আবার কোন বর্ণনায় আছে চলিলশ বছরের কথা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ أَرْبَعِينَ سَنَةً ثُمَّ يُتَوَفَّى فَيُصَلِّي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ)
‘‘অতঃপর তিনি চল্লিশ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানেরা তাঁর জানাযা নামায পড়ে দাফন করবে।[13] মুসলিম শরীফে আছে,
(ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ سَبْعَ سِنِينَ لَيْسَ بَيْنَ اثْنَيْنِ عَدَاوَةٌ)
‘‘অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে সাত বছর শান্তিতে বসাবাস করবে। পরস্পরের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ থাকবেনা’’।[14]
উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে আলেমগণ বলেনঃ যে বর্ণনায় সাত বছরের কথা বলা হয়েছে সেখানে অবতরণ করার পর সাত বছরের কথা বলা হয়েছে। আর যেখানে চল্লিশ বছরের কথা বলা হয়েছে সেখানে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার সময় তাঁর বয়সকে পুনরায় হিসাব করে দেখানো হয়েছে।
ঈসা (আঃ)এর মৃত্যু বরণ এবং দাফনঃ
তিনি কোথায় মৃত্যু বরণ করবেন- এব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়না। তদুপরি কোন কোন আলেম বলেনঃ তিনি মদ্বীনায় ইন্তেকাল করবেন এবং মদ্বীনাতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে তাঁকে দাফন করা হবে। ইমাম করতুবী বলেনঃ তাঁর কবর কোথায় হবে- এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন বায়তুল মাকদিসে আবার কেউ বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে মদ্বীনায় তাঁর কবর হবে।[15] (আল্লাহই ভাল জানেন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন