বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭

হাদিস মানা আল্লাহর নির্দেশ!

posted by:  diner dak desk

 

          
 

বিষয়: হাদিস মানা আল্লাহর নির্দেশ!
লেখক: শায়খ আব্দুল্লাহ আল কাফী
.
.
হাদীছ মানা আল্লাহর নির্দেশঃ
আল হামদুলিল্লাহ্ ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্ ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাহবিহি ওয়া মান ওয়ালাহ।
মহানবী মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ (সাঃ) চল্লিশ বছর বয়সের পূর্বে জাতির সাধারণ মানুষদের মতই জীবন-যাপন করতেন। আল্লাহ তাকে নির্বাচিত করে পথভ্রষ্ট সমগ্র মানব জাতিকে (৩৪:২৮) সঠিক পথে আহ্বানের জন্যে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন। শিক্ষা দিলেন কুরআন ও ঈমান। তারপর দায়িত্ব দিলেন সেই পথে মানুষকে আহ্বানের। আল্লাহ বলেন, ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺃَﻭْﺣَﻴْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺭُﻭﺣًﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻧَﺎ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﺪْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏُ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻧَﻬْﺪِﻱ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻧَﺸَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻧَﺎ ﻭَﺇِﻧَّﻚَ ﻟَﺘَﻬْﺪِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺻِﺮَﺍﻁٍ ﻣُﺴْﺘَﻘِﻴﻢٍ আর এইভাবে আমি আপনার প্রতি ওহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে; আপনি তো জানতেন না কিতাব কি ও ঈমান কি, পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করে দেই। আর আপনি অবশ্যই সরল সঠিক পথে মানুষকে আহ্বান করতেই থাকবেন।”(সূরা শূরাঃ ৫২) আল্লাহ্ রাসূলকে আদেশ করলেন মানুষকে হেদায়াত করার, আর মানুষকে আদেশ করলেন তিনি যা বলেন তা গ্রহণ করার।
রাসূল (সাঃ যা দিয়েছেন তাই হচ্ছে হাদীছঃ
আল্লাহ বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﺎﻧْﺘَﻬُﻮﺍ “রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা হাশরঃ ৭) এই রাসূল আমাদেরকে যেমন কুরআন দিয়েছেন, সেই সাথে কুরআনকে কিভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হও, তাও আল্লাহর নির্দেশ মোতাকেব দিয়েছেন। আর বাস্তব জীবনের ঐ প্রয়োগটাই হচ্ছে বিদগ্ধ বিদ্বানদের ভাষায় হাদীছ। কুরআনে যা নিষেধ করা হয়েছে, তার মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূলও কিছু বিষয় নিষেধ করেছেন। যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আল্লাহ্ দিয়েছেন। রাসূলের আদেশ-নিষেধের কোন দরকার না থাকলে, আল্লাহ্ তাঁর কথা উল্লেখ করতেন না। বলতেন এই কুরআনে যা আছে তোমরা তা মেনে নাও, যা নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাক। অথচ কুরআনকে মেনে নেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ বহু জায়গায় নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্থানে বিশেষ ভাবে রাসূলের প্রদান এবং নিষেধের কথা উল্লেখ করায় বুঝা যায় তিনিও আদেশ করেন এবং নিষেধ করেন। তবে অবশ্যই তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে হয়ে থাকে। আর তাঁর এই আদেশ-নিষেধই হচ্ছে হাদীছ।
মতভেদ হলে আল্লাহর কুরআন এবং রাসূল (সাঃ)এর হাদীছ থেকে সমাধান নিতে হবেঃ
অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর কথা মেনে নেয়ার সাথে সাথে রাসূলের কথাকেও মানতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর..।” (মুহাম্মাদঃ৩৩) আরো সূরা নূরঃ ৫৪। রাসূলের কোন কথা না থাকলে আলাদাভাবে তাঁর অনুগত্য করার জন্যে ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ শব্দ ব্যবহারের দরকার ছিল না।
পার্থক্য লক্ষ্য করুনঃ সূরা নিসার ৫৯নং আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর এবং রাসূলের অনুগত্য করার সাথে সাথে উলুল আমর তথা মুসলিম শাসকেরও আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের শাসকবর্গের। এখানে ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ শব্দটি যেমন আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে একইভাবে রাসূলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়েছে; কিন্তু উলুল আমরের আনুগত্যের ক্ষেত্রে শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়নি। এ থেকে বুঝা যায় আল্লাহর আনুগত্য যেমন বিনাবাক্য ব্যয়ে করতে হবে, অনুরূপ রাসূলের আনুগত্যও। কিন্তু উলুল আমরের আনুগত্য করার সময় খেয়াল রাখতে হবে তার কথা আল্লাহ এবং রাসূলের কথার সাথে মিল আছে কি না। অর্থাৎ তাঁর অনুগত্য তাঁদের আনুগত্যের মাপকাঠিতে হতে হবে।
এই জন্যে মতভেদ বা সমস্যা হলে সমাধান কিভাবে করতে হবে আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ্ তা বলে দিয়েছেনঃ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﺮُﺩُّﻭﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করলে তার সমাধানে জন্যে আল্লাহ্ এবং রাসূলের স্মরণাপন্ন হবে। এখানে আর উলুল আমরের কথা বলা হয়নি। কেননা তাদের সমাধান গ্রহণযোগ্য নয়। সমাধান আ্ল্লাহ এবং তাঁর রাসূল দিবেন। অর্থাৎ আল্লাহর কুরআন এবং রাসূল (সাঃ) নিজে। তিনি জীবদ্দশায় নিজে সমাধান দিয়েছেন, আর তাঁর মৃত্যুর পর কুরআন এবং সেই সাথে তাঁর রেখে যাওয়া সমাধান সমূহ যার অপর নাম হাদীছ।

আল্লাহ যেমন ফায়সালা করেন রাসূল (সাঃ)ও তেমন করেন
কুরআনের অনেক স্থানে রাসূলও নির্দেশ দেন ফায়সালা করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺺِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻠَﺎﻟًﺎ ﻣُﺒِﻴﻨًﺎ
“আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল কোন বিষয় ফায়সালা করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।” (সূরা আহযাবঃ ৩৬)
এখানে, আল্লাহর ফায়সালা যেমন লঙ্ঘন করার কারো অধিকার নেই, তেমনি রাসূলের আদেশ লঙ্ঘণেরও কোন অধিকার কারো নেই। আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে যেমন পথভ্রষ্ট হতে হবে তেমনি রাসূলের আদেশ লঙ্ঘণ করলেও একই পরিণতি হবে। রাসূলের কোন আদেশ নিষেধ না থাকলে তাঁর কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা অনর্থক হয়ে যায়।
রাসূল (সাঃ)এর ফায়সালা না মানলে ঈমান থাকবে নাঃ
রাসূলের ফায়সালা ও আদেশ-নিষেধের গুরুত্ব কত বেশী যে তা না মানলে মানুষ মুমিনই থাকবে না। আল্লাহ্ বলেন,
ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
“আপনার পালনকর্তার শপথ তারা ঈমানদার হতে পারবে না যে পর্যন্ত তারা পরস্পর বিরোধের বিষয়ের সমাধানের জন্যে আপনাকে বিচারক বা ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে, তারপর আপনি যে ফায়সালা করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে এবং তার প্রতি পূর্ণ আত্মসপমর্পণ না করবে।” সূরা নিসাঃ ৬৫) এখানে ভাষার প্রয়োগরূপটা দেখুন কিভাবে তাঁকে সম্বোধন করে (উপস্থিত একবচন) শব্দ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ আপনাকে বিচারক মানবে এবং ﻗَﻀَﻴْﺖَ আপনি ফায়সাল করেন। আর রাসূল (সাঃ) যা বিচার বা ফায়সালা করেছেন তাই হচ্ছে হাদীছ। রাসূল (সাঃ)এর যদি কোন ফায়সালা না থাকে বা তাঁর কথার কোন দরকার না থাকে, তবে তাঁকে বিশেষভাবে সম্বোধন করে এভাবে কথা বলা অনর্থক হয়ে যায়।
আল্লাহর ন্যায় রাসূলও হালাল করেন হারাম করেনঃ
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) হালাল করেন এবং হারামও করেন- আল্লাহ তাঁকে এই অনুমতি দিয়েছেন । আল্লাহ্ বলেন,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘَّﺒِﻌُﻮﻥَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺍﻟْﺄُﻣِّﻲَّ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺠِﺪُﻭﻧَﻪُ ﻣَﻜْﺘُﻮﺑًﺎ ﻋِﻨْﺪَﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧْﺠِﻴﻞِ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨْﻬَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺎﺋِﺚَ ﻭَﻳَﻀَﻊُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﺇِﺻْﺮَﻫُﻢْ ﻭَﺍﻟْﺄَﻏْﻠَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﺎﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺑِﻪِ ﻭَﻋَﺰَّﺭُﻭﻩُ ﻭَﻧَﺼَﺮُﻭﻩُ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻨُّﻮﺭَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻣَﻌَﻪُ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ
“যারা নিরক্ষর নবী রাসূল (মুহাম্মাদ)এর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায় (সেই নিরক্ষর নবী (সাঃ) মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন ও অন্যায় করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু সমূহ হালাল করে দেন এবং অপবিত্র বস্তু সমূহকে তাদের জন্যে হারাম করে দেন। আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদের মুক্ত করেন। অতএব যেসব লোক তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁর সহচর্য লাভ করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সেই নূরের (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তাঁর নিকট নাযিল হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই সফলতা লাভ করেছে।(সূরা আ’রাফঃ ১৫৭)এই আয়াতও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)ও আল্লাহর নির্দেশক্রমে কিছু বিষয় হালাল করেছেন এবং কিছু হারাম করেছেন। অচিরেই আমরা তার উদাহরণ উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ্। এই আয়াতেও লক্ষ্য করুন প্রথম দিকে নবীজীর অনুসরণের কথা বলার পর আবার তাঁর নিকট নাযিলকৃত নূর তথা কুরআনের অনুসরণের কথা আলাদাভাবে বলা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় কুরআনের অনুসরণ যেমন দরকার, তেমনি কুরআন প্রচারকারী মুহাম্মাদ (সাঃ)এর অনুসরণও দরকার। আর সেই অনুসরণই হচ্ছে তাঁর সীরাতের অনুসরণ তাঁর জীবনীর অনুসরণ অন্য কথায় তাঁর হাদীছের অনুসরণ।
হাদীছ না মানলে কুরআন মানা হবে নাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর অনুসরণই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কুরআনের অনুসরণ, কেননা তিনি কুরআনকে কিভাবে অনুসরণ করতে হবে তা নিজের জীবনে যেমন বাস্তবায়ন করেছেন, অনুরূপ তার যথাযথ তা’লীম সাহাবায়ে কেরামকেও দিয়ে গেছেন। এজন্যে আল্লাহ্ বলেছেন, ﻣَﻦْ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪَ “যে রাসূলের অনুসরণ করবে সে প্রকৃত অর্থে আল্লাহরই অনুসরণ করবে।” (সূরা নিসাঃ ৮০) আর তাঁর সুন্নাত বা জীবনীর অনুসরণ না করলে কুরআনের অনুসরণ সম্ভব নয়। যদি কুরআনের অনুসরণই যথেষ্ট হত, তবে আলাদাভাবে নবী (সাঃ)এর অনুসরণের প্রতি তাগিদ দেয়া হত না। বরং আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাইলে, তাঁর মাগফিরাত কামনা করলে রাসূল (সাঃ)এর অনুসরণ ছাড়া গত্যন্তর নেই। আল্লাহ বলেন, ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤْﺒِﺒْﻜُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮْ ﻟَﻜُﻢْ ﺫُﻧُﻮﺑَﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ “বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সমুদয় পাপ মার্জনা করবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল করুণাময়।” (সূরা আল ঈমরানঃ ৩১) আলাদাভাবে রাসূলের অনুসরণের দরকার না থাকলে এখানে ﻱ (আমার) সর্বনাম দ্বারা বাক্যটিকে উল্লেখ করার দরকার ছিল না। অতএব কুরআন অনুসরণ করতে চাইলে রাসূল (সাঃ)এর অনুসরণ দরকার। অন্যকথায় রাসূলের তথা তাঁর হাদীছের অনুসরণ না করলে আল্লাহর কুরআনের অনুসরণ হবে না, তাঁর ভালবাসা পাওয়া যাবে না এবং তাঁর মাগফিরাতও লাভ করা যাবে না।
প্রশ্ন, কুরআন থাকতে রাসূল (সাঃ)কেন আদেশ-নিষেধ করবেন? আর তার অনুসরণই বা আমরা করব কেন? তাহলে কি কুরআন পরিপূর্ণ গ্রন্থ নয়?
কেন তাঁর অনুসরণ করতে হবে? তার জবাব তো পূর্বের আয়াতগুলো থেকেই বিস্তারিত ভাবে পাওয়া যাচ্ছে। বাকী থাকল কুরআন থাকতে কেন তিনি আদেশ-নিষেধ করবেন? এর জবাব হচ্ছে ইসলামকে পরিপূর্ণ করার দায়িত্ব আল্লাহর এবং তিনি তা করেছেনও। তিনি ইসলামের সবকিছু বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)কে। তিনি বলেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ “হে রাসূল! আপনার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দিন।” (মায়েদাঃ ৬৭) সাথে সাথে এই পৌঁছে দেয়ার সময় যেন বিশদভাবে তা ব্যাখ্যা করে দেন। তাই আল্লাহ্ বলেন, ﻭَﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮَ ﻟِﺘُﺒَﻴِّﻦَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻣَﺎ ﻧُﺰِّﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ “নিশ্চয় আমি আপনার নিকট যিকির (কুরআন) নাযিল করেছি, যাতে করে আপনি বিশদভাবে মানুষের নিকট বর্ণনা করে দেন যা তাদের নিকট নাযিল করা হয়েছে।” (সূরা নাহালঃ ৪৪)
তাঁর এই বর্ণনা দু’টি পদ্ধতিতে হয়েছে। একটি মানুষকে সরাসরি কুরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। যে কুরআন আল্লাহ্ জিবরীল (আঃ) কর্তৃক সরাসরি নাযিল করেছেন। এটাকে বলা হয় ওহী মাতুল। অর্থাৎ এর ভাব ও ভাষা উভয়টি আল্লাহর নিকট থেকে সরাসরি এসেছে। আরেকটি পদ্ধতি কুরাআনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে। অর্থাৎ শব্দ বা বাক্যের ব্যাখ্যা উম্মতকে জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। যা তিনি পরোক্ষ অহীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে লাভ করেছেন। অর্থাৎ কুরআনের সংক্ষেপ ও সাধারণ আয়াত সমূহকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সাধারণ আয়াতকে সীমাবদ্ধ করেছেন। আবার শর্তযুক্ত আয়াতকে সাধারণ করেছেন। ব্যাপক অর্থবোধক আয়াতকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি। আর তা হয়েছে তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থনের মাধ্যমে। যার অপর নাম হচ্ছে হাদীছ।
তিনি এসব করার অধিকার কিভাবে পেলেন? এই অধিকার আল্লাহই তাকে দিয়েছেন যেমনটি সূরা নাহালের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে তিনি নিজের পক্ষ থেকেও এটা করেননি; পরোক্ষভাবে আল্লাহর নিকট ওহী বা নির্দেশনা লাভ করেই তিনি করেছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻨْﻄِﻖُ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻬَﻮَﻯ ‏( 3 ‏) ﺇِﻥْ ﻫُﻮَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺣْﻲٌ ﻳُﻮﺣَﻰ “তিনি নিজের পক্ষ থেকে প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে কোন কথা বলেন না, তিনি যা বলেন তা ওহী, যা তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।” (সূরা নাজমঃ ৩-৪) এখানে ওহী বলতে যেমন কুরআন উদ্দেশ্য, তেমনি কুরআন বুঝানোর জন্যে নবী (সাঃ)এর ব্যাখ্যাও উদ্দেশ্য। যার প্রমাণ আমরা অচিরেই পেশ করছি।
ওহীর নিয়মঃ আল্লাহ তিনটি নিয়মে মানুষের কাছে তথা নবী-রাসূলদের কাছে ওহী প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻠِّﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺣْﻴًﺎ ﺃَﻭْ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺃَﻭْ ﻳُﺮْﺳِﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻓَﻴُﻮﺣِﻲَ ﺑِﺈِﺫْﻧِﻪِ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀُ “কোন মানুষের জন্যে সমিচীন নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন; কিন্তু (১) ওহীর মাধ্যমে অথবা (২) পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা (৩) তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ্ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে।” (সূরা শূরাঃ ৫১) অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই ওহী করেন। আর সেটাই হল পরোক্ষ ওহী বা ওহী গাইর মাতুল। যাকে এলহামও বলা হয়। আল্লাহ্ নবীর অন্তরে যে বিষয়কে জাগ্রত করতেন সেটাই তাঁর ওহী ছিল। এটা কোন ফেরেশতার মাধ্যমে ছিল না। বিষয়টি যেমন জাগ্রত অবস্থায় হত তেমনি স্বপ্নযোগেও হত। এমতাবস্থায় সাধারণতঃ আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে শব্দ বা বাক্য অবতীর্ণ হয় না; কেবল বিষয়বস্তু অন্তরে জাগ্রত হয়, যা পয়গম্বরগণ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন। আর সেটাই হচ্ছে মুহাদ্দেছীনদের পরিভাষায় হাদীছ বা সুন্নাহ্। আর দ্বিতীয় পদ্ধতির ওহী হচ্ছে পর্দার অন্তরাল থেকে। যেটা মূসা (আঃ)এর সাথে তূর পর্বতে হয়েছিল। আর আমাদের নবী (সাঃ)এর সাথে মেরাজে গিয়ে আরশে পাকে হয়েছিল। আল্লাহ দর্শন না দিয়ে পর্দার অন্তরাল থেকে তাঁদের সাথে কথা বলেছেন এবং ওহী করেছেন আর সে সময় পাঁর ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন।
আর তৃতীয় পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়েছে আল্লাহর ওহী বা নির্দেশনা নাযিলের ক্ষেত্রে। আর তা হয়েছে জিবরাঈল (আঃ)এর মারফত। তাঁকে আমীনুল ওহী বলা হয়। কুরআনে রূহুল আমীন বলা হয়েছে। রাসূল কারীম (সম্মানিত দূত) বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﺍﻟْﺄَﻣِﻴﻦُ “বিশস্ত রূহ (জিবরীল ফেরেশতা) উহা (কুরআন) নিয়ে অবতরণ করেছেন।”(সূরা শুআরাঃ ১৯৩) আল্লাহ্ আরো বলেন, ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻘَﻮْﻝُ ﺭَﺳُﻮﻝٍ ﻛَﺮِﻳﻢٍ ‏( 19 ‏) ﺫِﻱ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻣَﻜِﻴﻦٍ ‏( 20 ‏) ﻣُﻄَﺎﻉٍ ﺛَﻢَّ ﺃَﻣِﻴﻦٍ “নিশ্চয় উহা (কুরআন) সম্মানিত রাসূল (দূত জিবরীল (আঃ)এর আনীত বাণী। যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী, ফেরেশতাগণের মান্যবর এবং আল্লাহর বিশ্বাসভাজন।” (সূরা তাকভীরঃ ১৯-২১) আল্লাহ আরো বলেন, ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻘَﻮْﻝُ ﺭَﺳُﻮﻝٍ ﻛَﺮِﻳﻢٍ “নিশ্চয় এই কুরআন একজন সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী।”(সূরা হাক্কাহঃ ৪০)
হাদীছ অস্বীকারকারীরা এই আয়াতগুলোতে ‘রাসূল’ বলতে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে বুঝাতে চায়। অথচ আয়াতের প্রসঙ্গতেই বুঝা যায় এখানে জিবরীল (আঃ)কে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ্ হাদীছ নাযিল করেছেনঃ
এখানে উল্লেখিত প্রথম পদ্ধতিটি হচ্ছে এমন ওহী যা আল্লাহ কোন ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া নাযিল করেছেন। আর সেটার সমর্থনে কুরআনে আরো অনেক আয়াত পাওয়া যায়। ইবরাহীম (আ) কা’বা গৃহ নির্মাণ করার পর ইসমাঈল (আ)এর বংশের জন্যে দু’আ করেছিলেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﺍﺑْﻌَﺚْ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ “হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের মধ্যে থেকে তাদের মধ্যে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের নিকট আপনার আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা প্রদান করবে এবং তাদেরকে শির্ক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ।” (সূরা বাকারাঃ ১২৯) আল্লাহ্ এই দু’আ কবুল করে তাদের মধ্যে তথা ইসমাঈলের বংশধর আরব জাতির মধ্যে সেই রাসূল প্রেরণ করেছেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ﻟَﻘَﺪْ ﻣَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫْ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُﺒِﻴﻦٍ “আল্লাহ্ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদেরই ভিতর থেকে তাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যে তাদেরকে তাঁর আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করে শোনাবে, তাদেরকে পবিত্র করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে। যদিও তারা ইতোপূর্বে সুস্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।” (সূরা আল ইমরানঃ ১৬৪)এ দু’টি আয়াতে হিকমত হচ্ছে রাসূল (সাঃ)এর হাদীছ, তিনি যা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ্ যেমন কুরআন নাযিল করেছেন তেমনি হিকমত তথা হাদীছও নাযিল করেছেন। আল্লাহ্ বলেন, ﻭَﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﻧِﻌْﻤَﺖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔِ ﻳَﻌِﻈُﻜُﻢْ ﺑِﻪِ “তোমাদের উপর আল্লাহর নে’য়ামতের কথা স্মরণ কর, আর যে কিতাব ও হিকমত তোমাদের নিকট নাযিল করেছেন, যা দ্বারা তিনি তোমাদের উপদেশ প্রদান করেন। (সূরা বাকারাঃ ২৩১) এখানে হিকমত অর্থ সুন্নাত বা রাসূল (সাঃ)এর হাদীছ যা আল্লাহ্ পরোক্ষভাবে কোন ফেরেশতার মাধ্যম ব্যতীত তাঁর নবীর কাছে নাযিল করেছেন।
ইমাশ শাফেঈ (রহঃ)বলেন, “আল্লাহ্ এই আয়াতে ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ উল্লেখ করেছেন তার অর্থ হচ্ছে কুরআন। আর উল্লেখ করেছেন ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔِ । আমি কুরআনের পন্ডিতদের নিকট শুনেছি তাঁরা বলেছেন এখানে হিকমত হচ্ছে রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাত। তিনি বলেন, এখানে হিকমত অর্থ রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছু করা জায়েয হবে না। কেননা উহা কিতাবের কথা উল্লেখ করার সাথে সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ তাঁর নিজের আনুগেত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ করা মানুষের উপর ফরয করে দিয়েছেন।


আরো দেখুন :
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। 

"কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

কোন মন্তব্য নেই:

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ ফেইসবুকে শেয়ার করুন   টুইটারে টুইট   প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন...