ফেইসবুকে শেয়ার করুন
১. "কুরআনের কথা" ২ ."বাংলা হাদিস" ৩ ."আল-হাদিস" ৪ ."কম্পিউটার অ্যাপস -- "জিকির" ৫ .Al Quran (tafsir & by word) ৬. Doa and Zikir (Hisanul Muslim) "হিসনুল মুসলিম" ৭ . "green tech" এর সবগুলোই ভাল
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ
আল্লাহ تعالى বলছেন, তাদের পথ যাদেরকে তিনি নিয়ামত ‘দিয়েছেন’। তিনি কিন্তু বলেননি, তাদের পথ যাদেরকে তিনি নিয়ামত দেন বা দেবেন বা দিচ্ছেন। এখানে অতীত কাল ব্যবহার করা হয়েছে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, যারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়েছেন, তারা অতীত হয়ে গেছেন। কু’রআনে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বহু ব্যক্তির এবং জাতির উদাহরণ দিয়েছেন, যারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে সফল হয়েছেন। যেমন: ইব্রাহিম عليه السلام, মুসা عليه السلام এবং সর্বোপরি মুহাম্মাদ عليه السلام এর উদাহরণ দিয়েছেন। আমাদেরকে তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে। সফল হবার পথের নিদর্শন আমাদেরকে আগেই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সফল হবার জন্য কোনো নতুন পথ আর আসবে না। কেউ যদি আপনাকে কোনো নতুন পথের সন্ধান দিয়ে বলে: এটা হচ্ছে সফল হবার পথ, তাহলে আপনি তার থেকে দূরে থাকুন।[১]
এছাড়াও আরেকটি মনে রাখার ব্যাপার হলো, আমাদের জন্য যারা আদর্শ, তারা কেউ এযুগের কোনো মানুষ নন। আমাদের আদর্শ মানুষরা অনেক আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। তাই আমরা যেন এযুগের কোনো মানুষকে আদর্শ হিসেবে ধরে, তাদের অন্ধ অনুকরণ করা শুরু না করি।
আরেকটি ব্যাপার হল, সুরা ফাতিহা কিন্তু শুধু আমাদেরকেই দেওয়া হয়নি, বরং সাহাবিদেরকেও দেওয়া হয়েছিল। সাহাবিদের বেলায় তাহলে “আনা’মতা আ’লাইহিম” কারা ছিলেন? নবী মুহম্মদ عليه السلام-কে যখন আল্লাহ تعالى সুরা ফাতিহা শিখিয়েছিলেন, তখন তার কাছে অনুসরণ করার মত আদর্শ কারা ছিলেন? কু’রআনে বহু জায়গায় আল্লাহ تعالى নবীকে عليه السلام এবং তার অনুসারিদেরকে (যার মধ্যে সাহাবারাও পড়েন), আগের নবীদের عليه السلام এবং কিছু সফল জাতির উদাহরণ দিয়েছেন, যাদেরকে আল্লাহ تعالى অনুসরণ করার মত আদর্শ বলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন। আমরা কু’রআন পড়লেই অনুসরণ করার মত এমন অনেক আদর্শ খুঁজে পাবো। কু’রআনে শত শত ঘটনা, কথোপকথন এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ تعالىআমাদেরকে সেই আদর্শগুলো শিখিয়েছেন।[১]
ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে আনআ’মা এসেছে নুউ’-মা نعومة থেকে, যার অর্থ নম্র, শান্ত, শিথিল ইত্যাদি। যেমন গরু, ভেড়াকে আনআ’ম বলা হয়, কারণ তারা সবসময়ই শান্ত, ধিরস্থির থাকে। অন্যদিকে বিড়ালকে দেখবেন সবসময় সতর্ক থাকতে। আল্লাহ تعالى এখানে আনআ’মা শব্দটি ব্যবহার করে আমাদেরকে শেখাচ্ছেন যে, যারা সিরা-তাল মুস্তাকি’মে চলে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, তাদের উপরে আল্লাহ تعالى শান্তি বর্ষণ করেছেন। তারা এখন শান্ত, শিথিল।[১]
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে
“মাগ’দুবি আ’লাইহিম” আরবিতে ব্যবহার করা হয় এমন কাউকে নির্দেশ করতে, যার উপর সবাই রেগে আছে। “মাগ’দুবি” শব্দটির অর্থ “ক্রোধের শিকার।” যখন কে কাজটা করছে তা বলা থাকে না, তার মানে হচ্ছে কাজটা করছে একাধিক জন, একজন নয়। অর্থাৎ অনেকে কারো উপরে রেগে আছে।[১]
আল্লাহ تعالى এখানে তাঁর কথা উল্লেখ না করে এই আয়াতটির অর্থকে অনেক ব্যাপক করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, আমরা যেন নিজের, পরিবারের, আত্মীয়স্বজনের, প্রতিবেশীর – সকল মানুষের এবং অন্যান্য সব সৃষ্টির এবং সর্বোপরি আল্লাহর ক্রোধের শিকার না হই। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সব ধরণের, সবার ক্রোধের শিকার হতে মানা করেছেন। মানুষের, ফেরেশতাদের এবং আল্লাহর ক্রোধের শিকার কারা হয়, তা কু’রআনের বেশ কিছু আয়াতে পরিস্কারভাবে বলা আছে এবং সেসব জায়গায় আল্লাহ تعالى পরিস্কারভাবে তাঁকে উল্লেখ করেছেন। সুরা ফাতিহাতে তিনি বিশেষভাবে তাঁকে উল্লেখ করেননি, কারণ তাঁর আমাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে: আমরা যেন ক্রোধের শিকার না হই, সেটা নিজের ক্রোধ এবং অন্যের ক্রোধ, দুটোই।
আদ্দ—ল্লি-ন এর অর্থ করা হয় “যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে”, কিন্তু এর অনুবাদ হওয়া উচিৎ “যারা পথ হারিয়ে ফেলেছে।” এরা সাধারণত এমন লোক নয় যারা ইচ্ছা করে পথ হারায়, কারণ যারা আল্লাহর বাণী জেনে শুনে অস্বীকার করে ভুল পথে চলে, তারা কাফির, তারা দল্লিন নয়। দল্লিন তারাই, যারা না বুঝে ভুল পথে আছে। যেমন ধরুন, আপনার দুটো বাচ্চা আছে। আপনি বড়টাকে বললেন, “ফ্রিজে চকলেট আছে, কিন্তু আমি না ফেরা পর্যন্ত তোমরা কেউ ফ্রিজ খুলবে না।” আপনি ফিরে এসে দেখেন দুই জনেই মহানন্দে চকলেট খাচ্ছে। বড়টা নিশ্চিত ভাবে আপনার আদেশ অমান্য করেছে, এবং ছোটটা না বুঝে ভুল করেছে। বড়টা হবে ‘ক্রোধের শিকার’, কিন্তু ছোটটা সেরকম বকা খাবে না। সুতরাং বড়টা হচ্ছে মাগ’দুবি-র উদাহরণ এবং ছোটটা হচ্ছে দল্লা-র উদাহরণ।
আল্লাহ تعالى আমাদের এখানে দুধরনের মানুষ থেকে সতর্ক করেছেন— আমরা যেন তাদের মতো না হই। এক ধরনের মানুষ জানে, বোঝে, কিন্তু মানে না। এরা জ্ঞানপাপী। পার্থিব লোভ, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, গর্ব, অহংকার এদের সত্য মেনে নেওয়া থেকে বিরত রাখে। দ্বিতীয় দলের মানুষেরা সত্য কোনটা, সেটা জানে না, জানার চেষ্টাও করে না। এরা বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণ করে যায়।
সুরা ফাতিহার কিছু ভাষা তাত্ত্বিক মাধুর্য
১) সুরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াত কবিতার ছন্দের মত শেষ হয় ‘ইম’ বা ‘ইন’ দিয়ে। যেমন প্রথম আয়াত শেষ হয় রাহি-ম দিয়ে, দ্বিতীয় আয়াত শেষ হয় আ’লামি-ন দিয়ে, তৃতীয় আয়াত রাহি-ম, চতুর্থ আয়াত দি-ন।
২) সুরাটির মাঝামাঝি যেই আয়াতটি “ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের আয়াতগুলো হচ্ছে বিশেষ্য বাচক বাক্য এবং তার পরের আয়াতগুলো হচ্ছে ক্রিয়া বাচক বাক্য।
৩) “ইয়্যা-কা না’বুদু…” এর আগের আয়াতগুলো হচ্ছে আল্লাহর সম্পর্কে ধারণা। এর পরের আয়াতগুলো হচ্ছে আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া।
৩) সুরা ফাতিহার আয়াতগুলোর উচ্চারন ক্রমাগত ভারি এবং কঠিন হতে থাকে। যেমন প্রথম চারটি আয়াতে দেখবেন সেরকম ভারি শব্দ নেই। কিন্ত “ইয়্যাকা না’বুদু…” থেকে ক্রমাগত ভারি শব্দ শুরু হতে থাকে এবং ক্রমাগত ভারি শব্দ বাড়তে থাকে। যেমনঃ
- ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’ন − দুটা ভারি শব্দ।
- ইহদিনাস সিরা-তা’ল মুসতাকি’ম − দুটা ভারি শব্দ।
- সিরা-তা’ল্লাযিনা আনআ’মতা আ’লাইহিম − তিনটা ভারি শব্দ।
- গা’ইরিল মাগ’ধুবি আ’লাইহিম ওয়া লা দ্দ−ল্লি-ন – চারটা ভারি শব্দ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন